তাইসলাম॥ আসছে অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন অপারেটরদের ইন্টারনেট থেকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হিসাবে বলা হয়, ভ্যাটবিহীন ইন্টারনেট দেওয়া হলে সকলে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাবে এবং সরকারের রূপকল্প ও ডিজিটালাইজেশন বাস্তবায়ন সহজ হবে। মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যামটবের সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির এসব কথা বলেন। এ সময় মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সাহেদ আলম। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
সংগঠনের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, ২০১৬ সালে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো মোট জিডিপির ৬.২ শতাংশ যোগান দিয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ২০২০ সালে এ খাত থেকে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো যে আয় করে তার প্রায় ৫০ শতাংশ (প্রতি ১০০ টাকায় ৫০ টাকা) সরকার পায়। বাকি ৫০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ সার্ভিসিংয়ে ব্যয় করতে হয়। আর কোন দেশে মুঠোফোন অপারেটরগুলোর উপর এত বেশি কর বোঝা নেই। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কর বোঝা নিয়েও আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে কম মূল্যে ইন্টারনেট ও গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এ খাতের দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়নে কর প্রণোদনা প্রয়োজন।
নুরুল কবির বলেন, সকলের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার সহজ, ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইন্টারনেট সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া দরকার। এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সহজ হবে। এছাড়া সরকারের উচিত হবে সিম কার্ডের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা।
নুরুল কবির বলেন, দেশের ৪৬ শতাংশ মানুষ এখনো মোবাইল নেটওয়ার্কের বাইরে আছে। বিশাল এ জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। মোবাইল অপারেটরগুলো সরকারের ডিজিটাল ভিশন বাস্তবায়নের জন্য বদ্ধ পরিকর। তারা গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। “মোবাইল অপারেটররা এ খাতের অগ্রপথিক। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের অংশীজনদের উপর উচ্চ করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ খাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানিসমূহকে ৪০ শতাংশ ও তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানিসমূহকে ৪৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট কর পরিশোধ করতে হয়। এতো উচ্চ করারোপ অন্য কোনো খাতে করা হয়নি।”
তিনি বলেন, উচ্চ করারোপ সরকারের লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে আলাদাভাবে বিবেচনা না করে অন্যান্য সাধারণ কোম্পানির মতো এ খাতে কর্পোরেট কর ৩৫ শতাংশ করা উচিত।
নুরুল কবির আরও বলেন, সিম ও রিম সরবরাহের ক্ষেত্রে ৩৬.৬৫ টাকা ভ্যাট ও ৬৩.৩৫ টাকা সম্পূরক শুল্কসহ ১০০ টাকা সিম ট্যাক্স ও রিপ্লেসমেন্টে সিমে ১০০ টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়।
আসন্ন বাজেটে প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি, গ্রামীণ গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা, কোম্পানিসমূহকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এই ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহার হওয়া উচিত।