সত্যের শিকড় বৈরী মিডিয়ায় কি হচ্ছে! জানতে চাই, জবাব চাই…

তোফাজ্জল হোসেন ভূইয়া॥ জোলি কি গালি খাচ্ছেন না জেলি খাচ্ছেন, জাস্টিন বিবার কেঁদে দিলেন না পেঁদে দিলেন, ঐশ্বরিয়া কিস দিলেন না শীষ দিলেন, পামেলা নতুন বেবি নিলেন না হাবি নিলেন, কামিলা পার্কার হেগে গেলেন না ভেগে গেলেন? এরকম আলোচনা চলচিত্র জগতে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটছে। বরং না ঘটাটাই অস্বাভাবিক। আর এসব খবর প্রকাশিত, প্রচারিত হয়-ওদের ট্যাবলেয়ড পত্রিকায়। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম- অপু-সাকিবের খবর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার সহ সব জাতীয় পত্রিকার শিরোণাম হয়েছে। বিনোদন পাতায় আসলে কিছুই বলার ছিলোনা। হলিউড কাঁপানো অভিনেতা একাডেমি পুরষ্কার প্রাপ্ত রবিন উইলিয়ামস সুইসাইড করার খবর পর্যন্ত ওদের কোনো জাতীয় পত্রিকার হেড লাইন হয়নি। কোন নায়ক-নায়িকার কি হলো না হলো -তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা। আমার জীবন-ওদের জীবনের সাথে চুল পরিমাণও সম্পৃক্ত না। আমার জানা দরকার ছিলো- দুলক্ষ হেক্টর জমির ধান হারিয়ে কৃষকের কি দূর্দশা হচ্ছে? এই খবরটি কেন জাতীয় পত্রিকার শিরোণাম হলোনা? কেন-ভেসে যাওয়া ধানী জমির পাশে অসহায় কৃষকের কান্নার ছবি-আমার-আপনার, পত্রিকা-মিডিয়ার খবরে সয়লাব হয়ে গেলোনা? কেন একজন কৃষককে নিয়ে এসে ধানের জন্য তার কান্নার ছবি লাইভ প্রচার করা হলোনা? কারণ-আপনাদের স্টুডিওতে কাদা লেগে যাবে। কারণ-যে ভাত দেয় তার চোখের কান্নায় গ্লামার নেই-যে বিনোদন দেয় তাদের চোখের কান্নায় গ্লামার আছে? কেন-ইরাক-লিবিয়া আর সদ্য আতঙ্কে থাকা মিশরে আটকে পড়া শত শত প্রবাসী শ্রমজীবী মানুষগুলোর চীৎকার আপনাকে-আমাকে স্পর্শ করেনা? কেন ওদের ছবিগুলো জাতীয় পত্রিকার পাতায় আসেনা-কারণ-ওরা শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য রেমিটেন্স দেয়-কিন্তু বিনোদনের জন্য ড্যান্স দেয়না। লালবোট ডুবে যাওয়া সন্দীপের লাশগুলো স্বজনেরা ফিরে পেলো কিনা-সেই খবরটাও কেন জাতীয় পত্রিকার প্রথম পাতায় আসলো না? গাজলডোবা বাঁধে তিস্তার ওপর মুন্নি সাহার জলকেলি করার কয়েকটি ছবি দেখলাম। কিন্তু রিপোর্ট করতে গিয়েছেন -নাকি ছবির স্যুটিং করতে গিয়েছেন- ঠিক বুঝে ওঠতে পারলাম না। কাঁটা তারে ঝুলে থাকা ফেলানীর জন্য ভারতীয় বিএসএফ বা ব্লাড সাকার ফোর্স যেমন-অপরাধী। ঠিক-আমরাও অপরাধি। বিদ্যালয়ে ৭০% শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলে-বিশাল অর্জন বলে মনে করা হয়। কিন্তু বাকি ৩০% শিক্ষার্থীরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে? ইয়াবা পকেটে নিয়ে ঘুরছে নাকি ঠিক এই সময়ে বর্ডার পার হচ্ছে? ঘরে ফিরছে নাকি লাপাত্তা হয়ে গেছে? পাচারকারী দলের সঙ্গি হয়েছে নাকি গোপনে জঙ্গি হয়েছে? দুইকোটি শিশু এখনো ফুটপাতে রাত কাটায়, প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষা বিসর্জন দিয়ে ভাতের জন্য – মিল-কারখানা ফ্যাক্টরিত কাজ করে, এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশনে, বাসস্টেশানে, মাজারে, বাজারে অগণিত মানুষ ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যায়, ডুবে যাওয়া লাশের জন্য স্বজনেরা আহাজারি করে, হেক্টরের পর হেক্টর ধান হারিয়ে আগামী কাল কি খাবে, কি করবে-সংসারের প্রতিটি সদস্যের অন্নের জন্য কৃষক আর্তনাদ করে ওঠে-এই শিশুগুলোকে -এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর পরিকল্পনার খবরই জানতে চাই। জানতে চাই-স্বাধীনতার আর কত বছর পর -আর কত সরকার বদল হয়ে মানুষের শুধুমাত্র পাঁচটি মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। আগে বুঝতে চাই ভাত, তারপরে জাত। আগে বস্ত্র তারপরে অস্ত্র। আগে বাসস্থান-তারপরে হয় শশ্মান না হয় গোরস্থান। আগে বই-খাতা, তারপর বিনোদনের পাতা। আগে চিকিৎসা, জীবনের স্পন্দন তারপরে খুচরা নায়ক-নায়িকার ক্রন্দন। এসবের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত কেকার রান্না, অপু-সাকিবের কান্না, আইপিএলের খেলা, বৈশাখি মেলা এসবের কোনো কিছুই আমার চুলও স্পর্শ করেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.