বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর এলাকার পানিতে ইউরেনিয়াম থাকার অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য বিএনপিকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা খবর ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব এলাকা বন্যাকবলিত হয় সেখানে সাধারণত মাছ ও জলজ প্রাণি মারা যায়।’ আজকে হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, হাওরের মানুষেরা দুর্ভোগে আছে, সেখানে বন্যা এলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে, আল্লাহর রহমতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এতো খারাপ অবস্থা আর হয়নি। এটা প্রকৃতির নিয়ম, প্রাকৃতিকভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে চোখ কান বন্ধ করে বসে নেই। হাওর এলাকার মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, যেমন ক্ষেতের ফসল যাদের নষ্ট হয়েছে তাদের ৩০ কেজি করে চাল, ৫শ’ টাকা করে নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন যারা আছে তাদের আমরা খোঁজ নিতে বলেছি। আমাদের দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে খাদ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ই এখানে সচল, প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে সজাগ এবং তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে, কিছু অপপ্রচার আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমি দেখলাম বিএনপি’র কোন একজন নেতা ভাবখানা এমন মহাবিজ্ঞানী, জ্ঞানী তিনি বলে দিলেন, ভারত থেকে ইউরেনিয়াম এসে এই হাওর অঞ্চলের মাছ মেরে ফেলছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন এই অভিযোগটা আসল তখন কিন্তু আমরা বসে থাকিনি। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন থেকে বিজ্ঞানী পাঠিয়ে সেখানকার পানি পরীক্ষা করা হলো। তাঁরা বললো সেখানকার পানিতে এরকম কিছু পাওয়া যায়নি। একথা শোনার পরেও তারা (বিএনপি) প্রেস কনফারেন্স করে একথা বলে বেড়াচ্ছে- এর মানে কি? শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলবো, তারা যে কথাটা বলছে তার প্রমাণ নিয়ে তারা উপস্থিত হোন। তারা যদি বৈজ্ঞানিকভাবে এটা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখাতে পারে, তবে জনগণ বিশ্বাস করবে। না হলে তাদের এই মিথ্যা অপপ্রচার জনগণ কখনও মেনে নেবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথন কোথাও এরকম বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হয়, তখন সেখানকার মাছ ও জলজপ্রাণী মারা যায়। সেটাও কেন মারা যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা খবর নিচ্ছি। কিন্তু, নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে মানুষের মধ্যে এই যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এটা অবশ্যই কারো কারো চরিত্র। এক শ্রেণীর লোক আছে তারা জ্ঞান পাপি। তারা দেখে হোক না দেখে হোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা কথা বলে বেড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে কওমী মাদ্রাসার অবদান রয়েছে। এটাকে অস্বীকার করা যাবে না। দেওবন্দ যে কওমী মাদ্রাসা, যারা প্রথম ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে তাদের হাতেই তৈরি, তারাই করেছিল। সেখানকার যে কারিকুলাম সেটা কিন্তু ভারত গ্রহণ করেনি। ভারতে যদি আপনারা খোঁজ নেন তাহলে দেখবেন- কোলকাতায় যেসব মাদ্রাসা আছে সেখানে হিন্দু, মুসলমান সকলেই লেখাপড়া করছে। এরকমও মাদ্রাসা আছে যেখানে ৪০ ভাগ হিন্দু শিক্ষার্থীও রয়েছে। আমাদের কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ৬টি বোর্ডে বিভক্ত। তাদের কারিকুলাম আলাদা। এখানে কি পড়ালেখা হচ্ছে তার খবর কেউ কোনদিন রাখেনি। তারা সেখানে ফার্সি, আরবি, উর্দু প্রভৃতি ভাষা শিখায়। পাশাপাশি অনেক মাদ্রাসায় আবার কম্পিউটারসহ অনেক কিছুই শিখাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন ১৪ লাখ শিক্ষার্থী ৭৫ হাজার কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করছে। তাদের কারিকুলাম কি? কি তারা শিখছে কেউ বলতেই পারছে না। সেই জায়গায় আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, যে উদ্যোগ আমাদের বহু আগেই নেয়া উচিত ছিল, যাতে করে তাদের শিক্ষা যেন মান সম্পন্ন হয়। আর এই শিক্ষার মাধ্যমে তাদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আমি যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে ছিলাম সে সময় মাদ্রাসার শিক্ষকদের নিয়ে বসি, আলাপ-আলোচনা করি এবং তাদের ওপর দায়িত্ব দেই-আপনারাই ঠিক করেন আপনাদের কারিকুলাম কি হবে, আমরা একটা সনদ দিতে চাই। তিনি বলেন, সংবিধানেই আছে শিক্ষা সার্বজনিন এবং শিক্ষাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া রয়েছে। তাই নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। এটা হলো বাস্তব কথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য আমি ওলামাদের নিয়ে একটি কমিটি এবং পরে একটি কমিশন গঠন করি। তাদেরকেই দায়িত্ব দিয়ে বলি আপনারা এক জায়গায় বসে একটি সমঝোতায় আসেন। তাদেরকে সনদ দেয়ার জন্য আমরা আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিয়েছি। যেখান থেকে তাঁরা সনদ পেতে পারেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর ৬টি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের লোকজন এক হয়ে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে তারা কারিকুলাম গ্রহণ করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন তারা এক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তখনই আমরা ঘোষণা দিলাম, আমরা সনদ দেব। আর তাদের কারিকুলামগুলো কেমন হবে সেটির জন্য একটি কমিটিও গঠন করে দেয়া হয়েছে। তাদের অফিসও দেয়া হয়েছে, তারা সেখানে বসে এই কারিকুলাম ঠিক করবেন। এতো দেওবন্দের কারিকুলামও তারা গ্রহণ করবেন এবং এর বাইরে আর কি কি নেবেন তা তারা ঠিক করবেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, হাইকোর্টে যে স্ট্যাচু করা হয়েছে সেটা নিয়েও কথা উঠেছে। গ্রিক গডেস অব জাস্টিস, থেমেসিস। তার স্ট্যাচু। কিন্তু গ্রিক স্ট্যাচুকে যখন শাড়ি পড়িয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো- আমি সে বিষয়টিই চিফ জাস্টিসকে বলেছিলাম।
তিনি বলেন, স্ট্যাচুতো আমাদের দেশে অনেক আছে, থাকবে। এটাতো হাজার বছরের পুরনো একটা বিষয়। হাইকোর্টের মতো জায়গায় হঠাৎ এটা স্থাপন করা হলো কেন? ঈদগাহে নামাজ পড়তে গেলে এটা কেন আড়াল করে দেয়া হলো না। আর স্ট্যাচু যখন থাকবে তখন এটাকে কেন বিকৃত করা হলো। কাজেই আমি নিজেও বলেছি এটা আমার পছন্দ না। এটা আমি চিফ জাস্টিসকে বলেছি এবং যে ভাস্কর করেছেন তাকেও বলেছি।