মহান মে দিবস হিসেবে আমার উপলব্দিটা একটু ভিন্ন। কারন আমিও একজন শ্রমিক। কোন না কোনভাবে প্রত্যেকেই আমরা আমাদের মূল্যবান দান যা আল্লাহর নিকট থেকে পেয়েছি তা ব্যবহার করে পৃথিবীর মধ্যে যা খোদা তায়ালার সৃষ্টি তাদের সকলেরই সেবা করে যাচ্ছি। সেই অর্থে আমরা সকলেই শ্রমিক। শ্রমিক হিসেবে বিশেষ শ্রেণী সৃষ্টি করে বা বিভাজন তৈরী করতে আমি ব্যক্তিগতভাবে নারাজ। আমরা সকলেই শ্রমিক, কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে যাচ্ছে, কেউবা রক্ত বিক্রি করে অন্যের যোগান দিচ্ছে, আবার কেউবা তাঁর অর্জিত মেধা বিক্রি করে নিজের ও অন্যের উভয়েরই যোগান দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা সকলেই যার যার অবস্থান থেকে শ্রমিক। আমার কাছে শ্রমিক বা কাজের লোক এই শব্দটি খুবই সম্মানের। বেকার বা অকাজের লোক হওয়ার চেয়ে কাজের লোক বা শ্রমিক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করতে বেশী সম্মানীত বোধ করি। রাষ্ট্রের প্রধান থেকে শুরু করে একেবারে নিচু স্তুরের যে মানুষটি এমনকি পরিবারের গৃহিনী থেকে শুরু করে যে একেবারে কর্তাবাবু সবই কাজ করে খায় এবং যার যার যোগ্যতা দিয়ে বিভিন্ন পদে বা স্থানে আসীন। কিন্তু কাজ ভিন্ন হলেও তার নাম ধরণ এবং পরিচয় কিন্তু শ্রমিক বা কাজের লোক বা সেবক। এই সেবকদের সম্মান করাই আমাদের উচিত। কারণ সৃষ্টিকর্তা হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের ন্যায় কাজের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রেখেছেন কারণ আমরা যেন একজন আরেক জনের পরিপূরক হয়ে জীবন যাপন করতে পারি। আমাদের একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল বা প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সকলই সকলকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো। কারন আমরা কেউই নিজে স্বয়ৎসম্পূর্ণ নই। তাই বিনয় এবং শ্রদ্ধা আন্তরিকতা ও ভালবাসা আমাদের উন্নতির ও অগ্রগতির সেতুবন্ধনকে সুদৃঢ় করবে। কাজের ব্যাপার আমাদের সৃষ্টিকর্তার একটি আদেশ রয়েছে “ যারা কাজ করে তাঁরা বেতন পাবার যোগ্য এবং যারা কাজ না করে তাঁরা যেন না খেয়ে থাকে।”
মহান রাব্বুল আল-আমীন (তিনি) চান যেন প্রত্যেকেই ভালো কাজে লিপ্ত থাকি; কারণ কাজের মাধ্যমেই সামগ্রিক কল্যাণ নিহীত। আমরা যারা শ্রমিক শব্দ প্রয়োগ করে বিভাজন সৃষ্টি করি তাদের উদ্দেশ্যে মাবুদ আল্লাহর একটি “দিক নির্দেশনা রয়েছে— “তোমরা যারা মালিক, বেহেস্তে তোমাদের একজন মালিক আছেন ভেবে, তোমরা তোমাদের অধিনস্তদের (শ্রমিকদের) সঙ্গে ব্যবহার করিও।” চমৎকার এই নির্দেশনা… এই আলোকে যদি আমরা পরিচালিত হই তাহলে আমাদের মধ্যে আর বিভাজন বা ভেদাভেদ থাকবে না এমনকি জীবন, কর্মক্ষেত্র, সমাজ ব্যবস্থায় থাকবে উপচে পড়া শান্তি, আনন্দ এবং আগামীর দৃষ্টান্ত।
খোদা তায়ালা আরেক জায়গায় শ্রমিক বা কাজের লোকের প্রাপ্যের বা বেতনের বিষয়েও উল্লেখ করেছেন…“ যারা কাজ করে তারা বেতন পাবার যোগ্য; তাদের শরীরের ঘাম শুকুনোর পূর্বেই তাদের প্রাপ্য মুজুরি বা বেতন পরিশোধ করতে হবে।” এটাও শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং অমলিন নির্মল আনন্দের জন্যই। আমাদের এই সভ্যতাকে আরো সমৃদ্ধি এবং উচ্চাসনে বসানোর লক্ষ্যেই সৃষ্টিকতার মহা পবিত্র হুকুম বা বানী। শ্রমীক- মালিক এবং সকলের জন্য মাবুদ আল্লাহর একটি দরকারী হুকুম উল্লেখ করতে চাই কারণ আমাদের তো তারই নিকট ফিরে যেতে হবে। তাই এই দরকারী হুকুমটি এইরকম…“তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে।’ তার পরের দরকারী হুকুম হল এই… তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করবে।’ এই দুইটা হুকুমের চেয়ে বড় হুকুম আর কিছুই নেই।”
আজকের এই আনন্দের দিন এবং স্বরণের দিন। কারন এই দিনিটিকে দিবসে পরিণত করেছিল যারা … সেই শিকাগো শহরের হো মার্কেটের আত্মোৎসর্গকারী শ্রদ্ধেয় ভাই-বোনদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা ও তাদের বিদেহী আত্মার জন্য মাগফিরাতা কামনা করছি। তাদের কারণেই অধিকার এবং ন্যায্যতা ফিরে পেয়েছে আজকের শ্রমিক হিসেবে উপাধী পাওয়া মানুষজন। আমি সেই শ্রেণীর একজন হয়ে গর্বীত এবং আমার মত গর্বীত ভাই বোনদের প্রতি প্রকাশ করছি আমার শ্রদ্ধভরা সালাম, সহমর্মিতা ও নিরন্তর ভালবাসা। আমরা এগিয়ে যাব মানব কল্যাণের তরে; সেবকের দায়িত্ব নিয়ে; প্রত্যেকের প্রয়োজনে পাশে থাকব এবং সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জ্ঞান এবং দৈহিক শক্তির ও চিন্তার সমন্বয়ে যোগান দিয়ে যাব। কেউ আমরা সৃষ্টিকর্তার দৃষ্টিতে ছোট নই… বরং সবাই সমান। দাউদের (আ:) ভাষায় বলতে চাই… “হে আমার প্রাণ, কেন তুমি নিরাশ হয়ে পড়েছ? কেন এত চঞ্চল হয়ে উঠেছ? আল্লাহর উপরে আশা রাখ, কারণ আমি আবার তাঁর প্রশংসা করব; তিনি আমার উদ্ধারকর্তা ও আমার আল্লাহ।
দায়ুদের (আ:) কথার সঙ্গে মিল রেখে আল্লাহর আরেকটি বাক্য বা কথা উল্লেখ করছি… “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি; তা তোমাদের উপকারের জন্য, অপকারের জন্য নয়। সেই পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” হা আমাদের সকলের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হউক আল্লাহর পরিকল্পনার মধ্যে দিয়েই। আমরা সেই লক্ষ্য ও বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে যাবে এবং যেতে চাই। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন যেন আপনার দেখানো পথেই শেষদিন পর্যন্ত স্থির থেকে এগিয়ে যেতে পারি।
আমি শ্রমিক তাই এই দিবস নিয়ে অনেক গাল-গল্প লিখলাম। আসলে এই লিখা আমার একান্তই ব্যক্তিগত এবং কারো উদ্দেশ্যে নয় এমনকি কাউকে ছোট বা আঘাত করার জন্যও নয়। তবে সচেতনতা বা চেতনা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে। তবে আমার মায়ের একটি কথা বলতে হয় আক্কেলরে ইশারা আর বেক্কেলরে ধাক্কা… এই কথাটিও এই লিখাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।
শেষান্তে বলি দুনিয়ার সকল মানুষই যার যার জায়গায় সম্মানের এবং সেই সম্মানটুকু আমরা যেন চর্চায় রাখি। কোন কাজই ছোট না বরং সকল কাজকেই শ্রদ্ধা এবং সম্মান করতে শিখি এবং ঐ কাজে জরিতদের শ্রদ্ধা এমনকি উপযুক্ত মূল্যায়ন করি তাহলে আমাদের এই দিনের বা দিবসের তাৎপর্য ফলপ্রসু হবে। তারপরও বলছি আমরা যারা বিভিন্নভাবে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত তাদের উদ্দেশ্যে খোদার একটি বানী বা আয়াত উল্লেখ করে শেষ করছি … “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও ন¤্র। এতে তোমরা দিলে বিশ্রাম পাবে, কারণ আমার জোয়াল বয়ে নেওয়া সহজ ও আমার বোঝা হালকা।” সবাই ভাল থাকুন দেখা ও কথা হবে আবার নতুন কোন লিখার মাধ্যমে।