“তোমার মুখের কথা হ্যা যেন হ্যা হয়, আর না যেন না হয়। এই কথাটি সৃর্ষ্টিকর্তার বাণী বা আমাদের জন্য নাযেল হয়েছিল। আজ থেকে প্রায় তিন হাজারেরও বেশী সময় আগে হযরত ঈসা মসিহের মাধ্যমে আমাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। যা আজও অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু আমরা সেই আয়াত অমান্য করি প্রতিনিয়তই। আমরা মানুষ আর আমাদের ভুল হবে স্বাভাবিক কিন্তু ঐ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোব যাতে করে একই ভুল আর না হয়।
বর্তমানে আমাদের সমাজে বা দেশের সর্বস্তরেই আত্মঘাতী বা বেসামাল বক্তব্য উপস্থাপিত হয় প্রতিনিয়ত। এই অবস্থার উন্নতির স্থলে অবনতিই হচ্ছে অনবরত। রাষ্ট্রের তিনটি স্তরেও মাঝে মাঝে এই বেসামাল অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। ইদানিং আমাদের সর্বশ্রদ্ধেয় প্রধান বিচারপতিও জনসম্মুখ্যে বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছেন। বিভিন্ন বক্তব্যে এমনই প্রতীয়মান হয় যে, উনি সবকিছুই জানেন এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্যের পরামর্শে চলেন। এই কথাটি আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধান বিচারপতি তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টই করেছেন যে, আইন মন্ত্রনালয়ের কিছু লোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোজাচ্ছেন তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতির কথা শুনছেন না। এটা একটা হাস্যকর বক্তব্য এমনকি জন অসন্তোষ সৃষ্টির লক্ষ্যেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য। আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী তার মেধা এবং যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই আজ স্বীয় আসনে আসীন। তিনি শুধু এখন এদেশেরই প্রধানমন্ত্রী নন, বরং তিনি স্বীকৃত একজন বিশ্বনেতা। তাঁর অবস্থান দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের সর্বোচ্চ আসনে। সেই কথার তুলনা চলত যদি আজ বেগম সাহেব প্রধানমন্ত্রী হতেন। যাক কারো তুলনা না করে বরং মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে বলতে চাই আপনি যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে আমরা সাধুবাদ জানাব। জনতার কাতারে ফিরে আসুন এবং কাজ শুরু করুন। মহান ঐ পবিত্র দায়িত্বে থেকে এরকম কাজ না করাই জ্ঞানী এবং বিজ্ঞ সম্মানী পুজনিয় ব্যক্তির কাজ হবে। নতুবা আমরা সাধারণ জনগণ মনে করব আপনার কোন যোগ্যতাই নেই। কারণ আপনি প্রধানমন্ত্রী তথা আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যুক্তি, জ্ঞান নির্ভর এমনকি প্রয়োজনীয় ও যুগের দাবি আইনের স্বচ্ছতা বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নতুবা কেন পারছেন না আপনার ইচ্ছা বা স্বাধীন মতামত বাস্তবায়ন করতে।
আপনার সঙ্গে কারো ব্যক্তিগত দন্ধ নেই বরং আপনাকে আমরা ও সকল মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে সম্মান করি। কিন্তু কেন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের সম্মান নষ্ট করছেন। এই ধরণের খুনসুটি আমরা দেখেছি শৈশবে এবং অনভিজ্ঞ ও অশিক্ষিত পরিমন্ডলে এমনকি অবৈধ ক্ষমতা ও অর্থের বন্টনে। আমরা বোধ হয় এখনও আপনার প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধা পোষণ করেই এই লিখাগুলি লিখছি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন রাষ্ট্রের তিনিটি স্তরই একসঙ্গে একমত হয়ে কাজ করতে। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সেই আহবান এবং দিক নির্দেশনায় সাড়া না দিয়ে বড়ং বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে সংকট ঘনীভূত করারই পায়তারা চলছে। যদি কারো প্ররোচনায় এই মিশনে উপনিত হন তাহলে দেশের স্বার্থে এবং জাতীর স্বার্থে ফিরে আসুন। পাকিস্তান বিচার বিভাগ এবং সরকারের ন্যায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভাববেন না। এটা বাংলাদেশ এবং এই দেশের মানুষ সরকারে আস্থাশীল ও সরকারের অধিনস্ত সকল বিভাগ ও সংস্থার সমন্বয়ে কাজ করার পক্ষপাতি। এখানে দায়ের চেয়ে আছার ডাঙ্গর হওয়ার কোন কারণ নেই বা সুযোগও নেই।
আইন পরিবর্তন বা সংসদে পাসকৃত আইন অবৈধ রায় দেয়ার যেমন এখতিয়ার আছে তেমনি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের নিয়োগ ও বাতিল করার ক্ষমতাও সরকার এবং সদংসদ ও রাষ্ট্রপতির হাতেই রয়েছে। সুতরাং ক্ষমতা এবং এর ব্যবহার যথেচ্ছা হউক। কোন সংঘাত বা অন্তদদ্ধ আমাদের সহনশীল স্থিতিশীল বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কাম্য নয়। সবাই আমরা সেবক এবং সেবক হিসেবেই জনগণের কল্যাণের তরে একযোগে কাজ করে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব আমাদেরকে দিয়েছে মহান সংবিধান। সুতরাং ঐ সংবিধানকে আর কলংকিত না করে বরং সবাই একসঙ্গে বসে সকল মতৈক্য ঘুচিয়ে রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণে কাজ করুন।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী কারো পরিকল্পনা বা কথায় চলেন না। তিনি নিজস্ব স্বকীয়তা এবং সুদুর প্রসারী গ্রহনযোগ্য মানব কল্যাণে নিবদিত পরিকল্পনা মাফিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন। সুতরাং ওনার সম্পর্কে এমনকি সরকারের ভাবমুর্তী নষ্ট হয় এমন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সাধন অতিব জরুরী। তাই এখন ভেদাবেদ সৃষ্টি না করে বরং সমন্বিত পদক্ষেপ এবং গ্রহনযোগ্য সহবস্থান নিয়ে কাজ করাই শ্রেয়।
রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে অরাজনৈতিক মানুষজন পর্যন্ত এখন বিভিন্ন আত্মঘাতী এমনকি অসংলঘœ বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে মাঠে ময়দানে। কথিত আছে প্রচলিত হিসেবে আমরা দেখছি আত্মঘাতী ও বেসামাল বেহিসেবী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি এবং এর অঙ্গ-সংগঠন এর নেতারা। এই বিষয়টি এখন মানানসহ হিসেবেই জনগণ গ্রহণ করে নিযেছে। কিন্ত আমাদের পুরোনো রাজাকার মিশ্রিদ দল বিএনপি তাঁর অস্বীত্ব বিলোপলগ্নে এসে বেসামাল ও গরমিল বক্তব্য দিয়ে গলা শুকিয়ে মৃত্যু শয্যায় শায়ীত। তাদের বেসামালত্ব এবং জাতীয় পার্টির আত্মঘাতী বক্তব্যের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জামাত শিবীর ও ইসলামী জঙ্গীমনা দলগুলো। সেই তাল, লয় ও ছন্দ এখন সাধারন নিরীহ মানুষের জীবনে আছর করেছে। সরকার মাঝে মাঝে আশার আলো দেখালেও তা আবার পর্যবসীত হয় হতাশার রূপান্তরে। আমরা সাধারণ মানুষ দেখতে চাই সকল বেসামাল এবং আত্মঘাতী বক্তব্য ও কাজের অবসান। এই অবসান কল্পে দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব এবং ভূমিকা রয়েছে। সরকারের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ঐ ভুমিকায় জোড়ালো অবদান রাখা এখন সময়ের দাবী।
আত্মঘাতী ও বেসামাল বক্তব্যের ছাপ এখন সরকারী দল আওয়ামী লীগেও প্রতিফলিত হচ্ছে। আশা করি নেতাগণ অতি সাবধান হয়ে আচরণ করবেন। রাগ বা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে এমন কোন আচরণ বা বক্তব্য প্রকাশ করবেন না যা দলকে এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। এই কয়েকদিন তাই দেখেছি এমনকি সন্ত্রাস ও দূর্নীতির রাণী সেও গলা ফাটিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে আমাদের নেতা বা মন্ত্রীদের অসাবধানতার কারণে। দূর্নীতে জড়াগ্রস্থ ও বেসামাল কথা বলে ক্লান্ত এমনকি গলা শুকিয়ে মৃত প্রায় অবস্থা থেকেও বলার সুযোগ পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতারা টাকা নিয়ে বাহিরে পালাবে আর বি এন পি জীবন ফিরে পেয়ে দেশ গঠন করবে। চোরের মায়ের বড় গলা। এই বিষয়ে একটি কিতাবের আয়াত উল্লেখ করতে চাই:- “তোমরা শুনেছ, আগেকার লোকদের কাছে এই কথা বলা হয়েছে, ‘খুন করো না; যে খুন করে সে বিচারের দায়ে পড়বে।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, যে কেউ তার ভাইয়ের উপর রাগ করে সে বিচারের দায়ে পড়বে। যে কেউ তার ভাইকে বলে, ‘তুমি অপদার্থ,’ সে মহাসভার বিচারের দায়ে পড়বে। আর যে তার ভাইকে বলে, ‘তুমি বিবেকহীন,’ সে জাহান্নামের আগুনের দায়ে পড়বে।” আসুন আমরা চিন্তা করি আমাদের নিজেদেরকে নিয়ে। আমাদের অবস্থান কি জাহান্নাম? তা খুঁজে বের করে আগামী দিনের করনীয় নিয়ে এগিয়ে যাই।
এইযে আমরা একজন অরেকজনের দোষ খুঁজি এবং সকল দায় অপরের উপর চাপিয়ে দেয়। আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি আল্লাহ তায়ালা এই বিষয়ে কি বলেছেন.- “তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেরিয়ো না যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়, কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হবে। তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, ‘এস, তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই’? ভন্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে।” আসুন আমরা প্রত্যেকেই আমাদের নিজ চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করি এবং পরিস্কার দৃষ্টি নিয়ে ভাইয়ের চোখ পরিস্কার করার মনোভাবে এগিয়ে যায়। আর কাঁদা ছোড়াছোড়ি করে ঘোলাজলে মাছ শিকার করতে চেষ্টা না করি।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের মুখের কথার বিষাক্ততা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কি বলছেন:Ñ মুখের ভিতরে যা যায় তা মানুষকে নাপাক করে না, কিন্তু মুখের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে নাপাক করে।” মুখের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা অন্তর থেকে আসে, আর সেগুলোই মানুষকে নাপাক করে। অন্তর থেকেই খারাপ চিন্তা, খুন, সবরকম জেনা, চুরি, মিথ্যা সাক্ষি ও নিন্দা বের হয়ে আসে। এই সবই মানুষকে নাপাক করে। সুতরাং সাবধান তোমাদের মুখের লাগাম এখন ধরার উপযুক্ত সময়। আসুন আমরা সকলেই সমযত আচরণ করি। ভাষায় পরিশিলীত ও মার্জিত হই। কোনভাবেই আত্মঘাতী, অসাঢ় এবং বেসামাল বক্তব্য বা কথার ফুজঝুড়ি না আওড়াই। বিবেক, চোখ, কান খোলা রেখে ন¤্র, ভদ্র এবং শান্তিপ্রীয় সহাবস্থান বজায় রাখার নিমিত্তে প্রতিনিয়ত কাজ করি। অসাম্প্রদায়িক ভাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করি। অলাভজনক ও সর্বোত্তম ইবাদতী আচরণে আমরা প্রত্যেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যায়। আমাদের ঐক্য এবং লক্ষ্যে পৌঁছা মাত্র সময়ের ব্যপার। বিভেদ ও ফাটন ভেঙ্গে বের হয়ে আসি সাম্যের কাতারে এবং নিজেকে নিয়োজিত করি খোদার দেখানো পথে আখেরাতের কল্যাণের নিমিত্ত্বে।