ছানাউল্লাহ॥ সৌদি আরব সরকার প্রবাসীদের জন্য স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা গ্রীন কার্ড চালুর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সৌদি উপ প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গে’র সাথে এক সাক্ষাতকারে নতুন এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। গ্রীন কার্ড চালুর সিদ্ধান্তে উৎফুল্ল প্রবাসীরা যুবরাজ সালমানের এই সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
সৌদি গ্রীন কার্ড মুলত আমেরিকার গ্রিন কার্ডের আদলে হবে। একটা নির্দিষ্ট পরিমান ফি পরিশোধ করে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীরা এই গ্রীনকার্ড সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন যুবরাজ সালমান। নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সৌদিতে স্পন্সরশীপ সিস্টেমের বিলোপ ঘটবে। প্রবাসীরা যাকাত দিতে পারবেন, মূল্য সংযোজন কর পরিশোধ করতে পারবেন, যে কোন বীমা গ্রহণ করতে পারবেন। এমনকি তারা নিজস্ব সম্পদের মালিক হতে পারবেন, সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ের অধিকার পাবেন। স্বাধীনভাবে বাণিজ্য এবং শিল্প সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন।
আমির কাইয়ুম নামের একজন সৌদি প্রবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী বলছেন, ‘সরকার এই পরিকল্পনা বিগত ৪০ বছর কিংবা তার অধিক সময় ধরে যারা সৌদিতে বসবাস করছেন তাদের জন্য খুবই চমৎকার একটি সুযোগ হিসেবে এসেছে। আমি সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ করব যারা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পাবেন তাদের কমপক্ষে একটি সন্তানকে যেন যোগ্যতা অনুসারে সৌদি সামরিক বাহিনীতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, এটা প্রকৃত অর্থে বিশ্বব্যাপি আবাসন লাভের সার্বজনীন মানবাধিকারের একটা অংশ। আমরা খুবই গর্বিত ও আনন্দিত যে সৌদি সরকার প্রবাসীদের জন্য এমন একটা সুবর্ণ সুযোগ দিতে যাচ্ছে।
সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি আহমেদ ফয়েজ জেদ্দা থেকে বলছিলেন, ‘এত দিনে আমার স্বপ্ন পুরণ হতে চলেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমি খুবই আনন্দিত। আমি অন্যন্য প্রবাসীদের সাথে উৎফুল্ল, যারা তাদের জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় সৌদিতে কাটিয়েছে। সৌদি সরকার যদি আমাদের গ্রীনকার্ড বা স্থায়ী আবাসন সুবিধা দেয় সেটা হবে আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মানের ব্যাপার।’ তিনি আরও বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে যদি এদেশে স্থায়ী নাগরিকত্ব পাই তাহলে ইসলামের এই পবিত্র ভূমিকে রক্ষার একটা দুদান্ত সুযোগ সৃষ্টি হবে আমার জন্য। আমি এই দেশকে খুব ভালোবাসি, আমি এখানেই কাজ করি এবং এখানেই মৃত্যু বরণ করব। আমি চাই আমার কবর যেন এই মাটিতেই হয়।
অনেক প্রবাসীরা ইতোমধ্যে সৌদিকে তাদের সেকেন্ড হোম হিসেবে নিয়েছে। সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত তাদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। ব্যবসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবাসীদের বর্তমানে যে সমস্ত সমস্যার মুখে পড়তে হয় স্থায়ী আবাসনের অনুমতি পেলে সেই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তিপাবে বলে আশা করছেন তারা। রে এডওয়ার্ড গিলবার্ট নামের ফিলিপাইনের একজন স্থপতি ও প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বলছিলেন, যুবরাজ সালমানের প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি খুবই প্রখর। এটা দৃষ্টান্তমূলক একটি সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে সৌদি ফিলিপাইনের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যা আরও বেগবান হবে। তাদের জনগনের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। এতে সৌদি সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেক বেগবান হবে। রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
প্রবাসীদের গ্রিনকার্ডের ব্যবস্থা করে সৌদি আরব ১০০ বিলিয়ন ডলার রোজগার করতে পারবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এ সম্ভাবনার লক্ষ্যেই এমন পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সৌদি উপ প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
নতুন প্রজন্মের এই তরুণ রাষ্ট্রনেতার নিত্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৌদি আরবের নীতি এবং চরিত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে। তার এই ঘোষণা প্রবাসীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষনীয় মনে হয়েছে। এই নীতিমালা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সৌদি আরবে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ বা গ্রিনকার্ড পাবেন প্রবাসীরা।
উল্লেখ্য, সৌদিতে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি।