টিআইএন॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব ইসলামিক আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে যোগ দিতে সৌদি আরবে চারদিনের সরকারি সফরে আজ সন্ধ্যায় রিয়াদের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। আর ঠিক একই দিনে সৌদি আরবে আসছেন প্রথম বিদেশ সফরত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, সৌদি বাদশাহ এবং পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী ড. আওয়াদ বিন সালেহ আল আওয়াদ গত ১১ মে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাদশাহ্ আব্দুল আজিজের একটি আমন্ত্রণ বার্তা হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরকালে মক্কায় উমরাহ্ পালন করবেন এবং মদিনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজামোবারক জিয়ারত করবেন। আগামী ২১ মে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে বাদশাহ্ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গিদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের ভিভিআইপি ফ্লাইটটি আজ সন্ধায় রিয়াদের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ছেড়ে যাবে। ফ্লাইটটি একই দিন রাতে সৌদি রাজধানী রিয়াদে বাদশাহ্ খালিদ আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মোশি বিমান বন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমান বন্দর থেকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রাসহকারে রিয়াদের মোভেনপিক হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি দু’দিন এই হোটেলেই অবস্থান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২১ মে আরব ইসলামিক-আমেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে যোগ দিবেন। তিনি “গ্লোবাল সেন্টার ফর কমবেটিং এক্সট্রিমিস্ট থট’’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ’র দেয়া এক ভোজ সভায়ও যোগ দিবেন।
প্রধানমন্ত্রী মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করতে ২২ মে মদিনার উদ্দেশ্যে রিয়াদ ত্যাগ করবেন। তিনি একই দিনে বিকেলে জেদ্দার উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করবেন। বাদশাহ্ আব্দুল আজিজ বিমান বন্দরে পৌঁছার পর তিনি হারাম শরীফে পবিত্র উমরাহ্ পালন করতে মক্কায় যাবেন। শেখ হাসিনা ২৩ মে দেশে ফিরে আসবেন।
অপর দিকে, জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সফরে সৌদি সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন ট্রাম্প। সফরকে কেন্দ্র করে আরো ৫৬টি মুসলিম দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে রিয়াদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান। তাদের সামনেও বক্তব্য রাখবেন তিনি। যোগ দেবেন সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থা প্রতিরোধে আয়োজিত “আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে”। সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশসহ ৫৬টি মুসলিম দেশের নেতাদের সঙ্গে ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিস্তার রোধের উপায় নিয়ে শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন ট্রাম্প। এসব গোষ্ঠীর অর্থায়নের উৎস বন্ধে আলোচনা করবেন। এ আলোচনায় একসঙ্গে সবগুলো মুসলিম দেশের নেতাদের পাশে পাচ্ছেন ট্রাম্প। আর এটাই হবে মুসলিম বিশ্বের মন জয়ের মোক্ষম সময়। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক শিবলি তেলহামি বলেন, ‘ওবামা প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতারা মেনে নিতে পারেননি। তাদের মনে মার্কিন প্রশাসনের বিষয়ে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখন ট্রাম্প এ নীতিতে একটু ভিন্নতা আনলে তারা সাদরে গ্রহণ করবেন। আর সফরকালে এ চেষ্টাই করবেন ট্রাম্প।’
ব্রুকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক সিনিয়র ফেলো মিশেল ও’হ্যানন বলেন, ‘ট্রাম্পের এ সফরে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আর তা হবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির বাস্তব প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে। এতে ভূমিকা রাখবে সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের বর্তমান পরিস্থিতি।’ যদিও ওবামার রেখে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে এখনই বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না এ বিশ্লেষক।
সৌদি সফর শেষে সোজা ইসরায়েল যাবেন ট্রাম্প। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর ভ্যাটিকান সফরে গিয়ে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করবেন। রোম থেকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। সবশেষ সিসিলিতে জি-৭ দেশগুলোর বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তার।
নবনির্মিত কসবা থানা ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী