রাইসলাম॥ ‘ও ভাই আর ঘুমাইস না, উঠ। মাইনসে (মানুষ) বকা দিতাছে।’ গভীর ঘুমে অচেতন বড় ভাই রাব্বিকে এভাবেই ডেকে তোলার চেষ্টা করছিল চার-পাঁচ বছরের শিশু মালিহা। ছোট বোনের নিচু স্বরের ডাকে একবার নড়েচড়ে আড়মোড়া দিয়ে পাশ ফিরে ফের শুয়ে পড়ে রাব্বি। এ দৃশ্য দেখে পথচারীদের কেউ একজন চেঁচিয়ে বলেন, ‘দেখছেননি কারবার, পাঁচ-পাঁচটা পোলাপাইন গোটা ফুটপাত দখল কইরা কেমনে ঘুমাইতাছে। এতো হাউকাউয়েও ঘুম ভাঙে না।’
সকাল ৭টায় রাজধানীর আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বিপরীত দিকের ফুটপাতে জাগো নিউজের প্রতিবেদকের চোখে এ দৃশ্য ধরা পড়ে। এ সময় মর্নিং শিফটের ক্লাস থাকে। তাই অভিভাবকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে শিশুদের নামিয়ে দিতে আসেন। ফলে ভিড় জমে যায়। এছাড়া একই সময় আশপাশের অন্যান্য স্কুল-কলেজ ও চাকরিজীবীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া থাকায় রাস্তায় মানুষের ভিড়ে পথচলা দায় হয়ে পড়ে। কিন্তু চারদিকে রিকশার টুংটাং শব্দ, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের উচ্চ শব্দের হর্ন এবং পথচারীদের হাঁকডাকে চারদিক মুখরিত থাকলেও ফুটপাতে ঘুমানো রাব্বিদের ঘুম ভাঙে না। ছেঁড়া বিছানায় শুয়েও ওরা বেঘোরে ঘুমায়।
শিশু মালিহার সঙ্গে কথা বলতে দেখে এক মহিলা এগিয়ে এসে এ প্রতিবেদককে জানান, এখানে মালিহা ও তার বড় ভাই রাব্বি, মোহন, সুজন ও বোন মীম ঘুমিয়ে আছে। ওর বাবা নেই। মা মানুষের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে। কাকডাকা ভোরে উঠে মা কাজে চলে যায়। ওরা কেউ পড়াশুনা করে না। আজিমপুর কবরস্থানের সামনে টুকটাক ফুটফরমায়েশ ও হাত পেতে খায়। পেটে খাবার না থাকলেও ওদের রাতের ঘুম ভালো হয় বলে জানান ওই মহিলা।
আপনি কীভাবে বুঝলেন জিজ্ঞাসা করতেই মহিলা বলেন, ‘বড়লোকেরা তো সুন্দর বাড়ির সুন্দর বিছানায় শুইয়াও ঘুমের লাইগ্যা ছটফট করে। আর দেহেন না এতো মানুষ ও যানবাহনের হৈচৈ-হট্টগোলের মধ্যে কেমন পইড়া ঘুমাইতাছে। শুধু মালিহারা নয়, তাদের মতো বহু দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষকে পথে ঘাটে ও পার্কের বেঞ্চে এভাবে বেঘোরে ঘুমাতে দেখা যায়।’