আল-আমীন দেওয়ান॥ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠনটির ২০১৭-১৮ টার্মের তিনটি পদে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও শাখা এক চিঠিতে সংগঠনটির সংঘস্মারক ও সংঘবিধি সংশোধনের পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা দেয়া হয়। ফলে এর আগে চলতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আর কোনো কার্যক্রম হচ্ছে না। তাই বৃহস্পতিবার নমিনেশন আহবান করে নোটিশ দেয়ার কথা থাকলে তা আর হয়নি। তফসিল অনুযায়ী ৮ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা।
ডিটিও এর চিঠিতে বলা হয়, ‘বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা ১৯৯৪ এর বিধি ২১ বিলুপ্ত করা হয়েছে । এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সফটওয়্যারে বেসিস এর সংঘস্মারক এবং সংঘবিধি সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ পরিবর্তন বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশোধন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হল।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মিরাজুল ইসলাম উকিল জানান, ‘বেসিসকে আইন অনুযায়ী তাদের সংঘস্মারক ও সংঘবিধি সংশোধন করে তারপর নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে।’ সংশোধনের জন্য নিদির্ষ্ট কোনো সময় দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এই উপ-সচিব বলেন, ‘এটি তারা যত দ্রুত করে পারবেন তত দ্রুত নির্বাচন হবে। যদি এক সপ্তাহে পারেন এক সপ্তাহে, এক মাসে হলে এক মাসে । ’
বেসিস নির্বাচন বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম রাউলি জানান, ‘তিনি এখনও চিঠি দেখেননি। দেখে বোঝা যাবে করণীয় কী। তবে নমিনেশনের ঘোষণা এখনও দেয়া হয়নি।’ নির্দেশনা অনুয়ায়ী সংশোধন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগবে আর তা জানাতে চাইলে বেসিস সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জব্বার জানান, এখন একটি উপ-কমিটি করে দেয়া হবে। এর পর সংঘস্মারক-সংঘবিধির কোথায় কী সংশোধন হবে তা সনাক্ত করতে হবে।
‘কমিটি পুরো গঠনতন্ত্র যাচাই-বাছাই করে সংশোধন চিহ্নিত করে নির্বাহী কমিটির কাছে সুপারিশ করবে। নির্বাহী কমিটি পর্যালোচনা করে এতে মতামত বা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় সংশোধন যথাযথ বলার পরে অতিরিক্ত সাধারণ সভা (ইজিএম) ডেকে সেখানে তা তোলা হবে।’ মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ইজিএম এর জন্য ২১ দিনের সময় লাগবে। ইজিএমে পাশ হলে উপস্থিত সদস্যদের স্বাক্ষরসহ সংশোধিত গঠনতন্ত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়ার পরে জয়েন্ট স্টকে দিয়ে হালনাগাদ করতে হবে। আর এর পরই ওই সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
বর্তমান কমিটির প্রথম টার্মের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ জুলাই। কার্যনির্বাহী কমিটি এই সময়ে এটি করতে পারবে কিনা তা সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটির মেয়াদ বর্ধিত করার আবেদন করা হতে পারে বলে জানান সংগঠনটির সভাপতি। এর আগে বুধবার বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন পরিচালকের কাছে আবেদনে বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ তিন সদস্য সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট এম রাশিদুল হাসান ও পরিচালক উত্তম কুমার পালকে পদত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন বোর্ড। কিন্তু আপিল বোর্ডের বরাত দিয়ে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সংঘবিধি লংঘন করে আমাকেও লটারির মাধ্যমে পদত্যাগ করতে বলে। এটি আমার প্রতি অন্যায়। আমি কেবলমাত্র এক বছর ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।’
ওই আবেদনে তিনি ‘পদত্যাগে লটারি’ পদ্ধতি বেসিস সংঘবিধির ১২.৫ এবং ১৪.৫ এর লংঘন বলে উল্লেখ করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘বস্তুত এই দুটি ধারা অনুসারে ধারাবাহিকভাবে তিন বছর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করার পর থেকে এই পরিচালকগণ সংঘবিধি লংঘন করে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি তারা পরিচালক পদে অবৈধভাবে নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করেছেন।’
আবেদনে বিষয় ছিল, ‘বেসিস পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণের জন্য কৃত লটারি বাতিল, জ্যেষ্ঠ পরিচালকদের অবসর গ্রহণের নির্দেশ দান ও ৩ বছর ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালনকারী ৩ পরিচালককে পরিচালক পদ থেকে অপসারণের আবেদন’। সংগঠনটির বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুয়ায়ী ৩ বছরের সেশন সময়ে প্রতি টার্মে (প্রতি বছর) কার্যনির্বাহী কমিটি হতে ৩ জন পদত্যাগ করবেন। পদত্যাগ করে শূন্য হওয়া ৩ পদে হবে নির্বাচন।
নতুন নির্বাচিত এবং পুরোনো মিলে ৯ পরিচালক নতুন করে কার্যনির্বাহী কমিটির পদের দায়িত্ব নেওয়ার নির্বাচন করবেন। এবার পদত্যাগ নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় এবার ‘পদে থাকার জ্যেষ্ঠতা’র ভিত্তিতে কমিটির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট এম রাশিদুল হাসান ও পরিচালক উত্তম কুমার পালকে পদত্যাগ করতে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন বোর্ড। নির্বাচন বোর্ডের ওই সিদ্ধান্তে ‘আপত্তি’ করে আপিল বোর্ডে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন বোর্ড আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে চিঠি দিয়ে জানায়, জ্যেষ্ঠতা নয় পদত্যাগ হবে লটারি করে। ওই দিনই কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা এ সিদ্ধান্তের চিঠি পান।
গত মঙ্গলবার পদত্যাগের লটারিতে নাম ওঠে বেসিস কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা এ রহমানের।