চট্টগ্রাম প্রতিনিধি॥ স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৬ বছরে বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি। এমনকি শুল্ক পরিশোধ করে ব্যাগেজ রুলে আনা স্বর্ণের পরিমাণও একেবারেই নগণ্য। অথচ দেশের ছোট-বড় ৪০ হাজারের বেশি স্বর্ণ ব্যবসায়ী বছরে হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ বেচাকেনা করছে। নীতিমালা না থাকার অজুহাতে স্বর্ণ আমদানি করা যাচ্ছেনা বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করলেও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ চোরাচালানের মাধ্যমে আনা স্বর্ণ দিয়েই চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর স্বর্ণ ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয়। স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সুস্পষ্ট বিধিমালাও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষ যে কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলে স্বর্ণ আমদানি করা যায়। কিন্তু ব্যাপক চাহিদা থাকা স্বত্বেও বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়না। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নথিপত্র পর্যালোচনা করে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির কোনো নজির পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার এ এফ এম আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘এক ভরি স্বর্ণের জন্যে তিন হাজার টাকার ট্যাক্স দিয়ে আপনি স্বর্ণ আনতে পারেন। আমার কাছে যে তথ্য রয়েছে এই কাস্টম হাউজে অতীতে বা এ পর্যন্ত কোন স্বর্ণ আমদানি হয়নি।’ বাংলাদেশে জুয়েলার্স সমিতি’র তথ্য মতে, সারাদেশে ছোট-বড় জুয়েলারি দোকান রয়েছে ৪০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে জুয়েলার্স সমিতির আড়াই হাজার সদস্য থাকলেও দোকান রয়েছে প্রায় চার হাজার। সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও কোনো স্বর্ণ আমদানি করেনা। স্থানীয়ভাবে পাওয়া পুরাতন স্বর্ণের পাশাপাশি ব্যাগেজ রুলে আনা স্বর্ণ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি মৃণাল কান্তি ধর বলেন, ‘প্রতি ভরিতে যদি আমরা তিন হাজার টাকা করে ট্যাক্স দিই, আর প্রতি ভরিতে যদি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিই। তাহলে আমরা স্বর্ণ কিভাবে বিক্রি করবো। ক্রেতারা কোথায় যাবে।’ চট্টগ্রাম বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকবার সরকারের সঙ্গে বসেছি আমদানি করার জন্যে। মাল গুলি এনে আমাদের দেওয়ার জন্যে না হলে আমাদের অনুমতি দিক আমরা আনবো।’
সম্প্রতি ঢাকার বনানীতে দু’তরুণীর ধর্ষণ ঘটনার সাথে আপন জুয়েলার্স জড়িয়ে পড়ায় স্বর্ণ আমদানির বিষয়টি সামনে চলে আসে। আপন জুয়েলার্সের কয়েকটি শো রুম থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, শুল্ক পরিশোধ করে ব্যাগেজ রুলে এতো বিপুল স্বর্ণ আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ মিলন শেখ বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন বিধিমালা বা বিধান নেই। একটাই শর্ত আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে আমদানি করতে পারবেন। স্বর্ণ কন্টেইনারে আমদানি হয়না। এইটা হলে হবে বিমানের মাধ্যমে।’
বিভিন্ন সময় স্বর্ণের চালানসহ আটককৃতরা জানিয়েছে, মূলত মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ কাতার, কুয়েত এবং আরব আমিরাত থেকেই আকাশ পথে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণের বার বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দর হলো এদের প্রধান রুট। বিমান বন্দর অতিক্রমের পর কয়েক হাত ঘুরে সেগুলো চলে যায় মূল স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে।