ডিজিটাল শতাব্দির প্রতিষ্ঠালগ্নে এসে আবারও নতুন করে লিখতে বা বলতে এমনকি অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করতে হচ্ছে আমাদের (শ্রমিক নামধারী) সকলের। যুগে যুগে শ্রমীকের অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে শুধু অমানুষরূপী আরেক শ্রমীকেরই জন্য বা কল্যাণে। পৃথিবীর সব মানুষই কোন কোন ভাবে শ্রমীক শ্রেণীর অন্তভ’ক্ত। আমরা যে যাই করি না কেন; আমরা কিন্তু প্রকারান্তরে ও পর্যায়ক্রমে শ্রমীকই। এই শ্রমীক উপাধী ঘোছানোর কোন সুত্র বা উপায় আমাদের সামনে খোলা নেই। আমাদেরকে এই ওপাধির বিভিন্ন রুপান্তরিত নাম নিয়েই পৃথিবীতে জীবন যাপন করে যেতে হবে। ব্যবসার মালিক থেকে সরকার প্রধান এমনকি বাসার কর্তা ও কর্তৃ পর্যন্ত ঐ শ্রমিক শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। কারণ যারা শ্রম দেন, কাজ করেন; নিজের বা অন্যের চাহিদা পুরন বা যোগান দেয়ার জন্য তারা প্রত্যেকেই শ্রমিক।
মানব সভ্যতার বিবর্তনে এবং কালের পরিক্রমাই আজ ঐ সম্মানের পদবিটি কলুষিত। কেউ অর্থের মানদন্ডে ঐ শ্রমীক শ্রেনীতে উপনীত। আবার কেউ কাজের শ্রেণীভেদের কারণে ঐ শ্রেণীভ’ক্ত। কিন্তু যারা উঁচু স্তরের শ্রমীক তারা আবার নিজেদের সম্মান বৃদ্ধিকল্পে ঐ পদ ও পদবীর বাহারি এবং রকমারী উপাধী দিয়ে ঐ শ্রমীক শব্দটিকে ভ’পাতিত করে যাচ্ছে। যা সবই বাতাসের পিছনে দোলানো নল খাগড়ার মত। এই সকল শুভঙ্করের ফাঁকির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষমতা ও বংশ মর্যদা এবং শিক্ষার বাহাদুরী। শিক্ষার প্রসার এবং অগ্রসরতা মানুষকে মানব সভ্যতার চ’ড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে সহায়ক হওয়ার বিপরীতে মানুষকে তার মনুষত্যটুকু বিলিয়ে দিয়ে সভ্যতার বিবর্তন ঘটিয়ে নতুন এক পোড়ামাটি সোধাগন্ধ মিশানো কলঙ্কিত সভ্যতার নভরূপ লাভের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগ পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু এর যে যাতনা এবং বিরুপ প্রভাব তার কিন্তু পরিবর্তন হয়নি; হয়েছে শুধু নবরূপে কৌশলী আত্মপ্রকাশ।
পৃথীবির মহিয়সী এবং মহামানবগণ যে সভ্যতার বাস্তব রূপ দেখতে চেয়েছিলেন তার কিন্তু কোন বাস্তবসম্মত বাস্তবতা দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু খোদার ইচ্ছার বহি:প্রকাশই আজ আমাদেরকে টিকিয়ে রেখেছে সেই সুন্দর, শান্তির, আনন্দের, সমতার, পরমত সহিষ্ণুতার এমনকি সার্বজনীন কল্যাণের নিমিত্ত্বে বেহেস্তি আবহে রাস্তব রুপে প্রকাশিত হওয়ার নতুন এক ডিজিটাল সভ্যতার। এই সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে আমাদেরকে আরো কাঠ-খর পোরাতে হবে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশের মহান নেতা যার আভির্ভাব না হলে হয়ত আজকের বাংলাদেশ হতো না এবং বাঙ্গালী পেত না এক স্বতন্ত্র মানচিত্র এবং নতুন পরিচিতি। সেই নেতার আদর্শে ছিলো না কোন শ্রমীক এবং উচু-নীচু ভেদাভেদ। তিনি যেমন সানকিতে খেয়েছেন, কলাপাতায় খেয়েছেন এবং চিনা বাসনেও খেয়েছেন; তেমনি করে সকলের সঙ্গে এক অঙ্গে সহবস্থান নিয়ে পথ হেটেছেন এই নতুন সভ্যতারই লক্ষ্যে। দু:খী মানুষের দু:খের সঙ্গি হতেই তিনি মিশেছেন সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দ্বারে। সেই নেতার অনুসারীরাই আজ উচু নীচু এবং শ্রমীক ভেদাভেদে নিজেদেরকে দুর করে রাখেন ঐ লক্ষী এবং ভাগ্যন্নোয়নের অংশীদ্বারদের। মন্ত্রী, সচিব সকলেই সমাজের চোখে সেবক (শ্রমিক) এবং সেবার মানসিকতা এবং ওয়াদা দিয়ে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদেরই কেউ কেউ দেশের বাইরে গিয়ে এমন ভাব দেখান যে তারা সপ্ত আলমের বাদশা এবং তাদের কাছে আমাদের শ্রমীক / প্রবাসী ভাইয়েরা খুবই নি¤œ। তাই তাদের সঙ্গে দেখা করা বা কথা বলার সময়ে ও সুযোগ এমনকি ইচ্ছাও যেন নেই। প্রবাসী কারা এবং কেন এরা আজ প্রবাসে? এই কথাটি কি কেউ ভেবে দেখেছেন? আর তাদের আত্মত্যাগ কি আমাদের সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মত নয়? তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে আজ দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান রেখেছে। তারাই আমাদের লক্ষী। সেই লক্ষিকে পায়ে ঠেলার অধিকার কি আমাদের আছে? ভেবে দেখবেন। আমি যাদের উদ্দেশ্যে এই লিখাটি লিখেছি তারা কিন্ত জানেন এবং তারা কি আচরণ করেছেন বিদেশ সফরে গিয়ে তাও আশা করি মনে আছে। কার জন্য এবং কি উদ্দেশ্যে আপনারা বিদেশ গিয়েছিলেন? শ্রমীকদের কল্যানের জন্যইতো জনগণের টাকা ব্যায় করে গিয়েছেন এবং সেই শ্রমীকদেরকেই কিনা অবহেলা করলেন। তা কিন্তু আমাদের এই নব্য সভ্যতায় মানায় না।
ডিজিটাল সভ্যতায় কিন্তু সমতাভিত্তিক এবং জনবান্দব রাজনীতি ও নেতৃত্ব প্রয়োজন। কিন্তু এর বাইরে কিছু হলে জনগণ আপনাকে অতি সহজেই আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কেন আপনারা শিক্ষা নেননি। তিনি যখনই বাইরে যান তখনই তিনি প্রবাসীদেরকে যোগ্য সম্মান দিয়ে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন। আমি ওনার সফরসঙ্গি না হলেও প্রতিটি সফরের পরই তার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলি আমার জীবনে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। আমার এক প্রবাসী ভাই বড় গর্ব কওে একদিন আমাকে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর গত বছরের দুবাই সফরের বিষয়ে। যা মিডিয়ায় প্রকাশ হয়নি। সেই ঘটনাটি ছিল এমন যে, সকল প্রবাসী ভাই-বোনদের নিয়ে তিনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) বড় এক আয়োজনে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন এবং সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন এমন সময় আছর নামাজের আজানের ধ্বনী তাঁর কানে বাজল এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাইক ছেড়েদিলেন। বললেন আজানের ধ্বনী শুনে তার বুকটা জুড়ে গেল। সবকিছু পড়ে হবে, আগে নামাজ এবং পরে বাকি আনুষ্ঠানিকতা। এই মহান মহৎ এবং ফরহেজগার মুমিন নারীর কাজগুলো কি আদেরকে নতুন করে শিক্ষা দিতে পারে না। আমাদের মিডিয়া কি এই ঘটনাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না?
মিডিয়ার বদৌলতে এবং প্রত্যক্ষদর্শীর আলোচনান্তে জানতে পারি আমাদের দেশের নেতারা মুখে ওয়াদা করেন এবং কাজে ভিন্নতা দেখান। এই ভিন্নতাই পরবর্তীকালে দল এবং নিজেকে আস্তাকুড়ে পর্যবসীত করেছে এবং করবে। তবে যারা নতুন সভ্যতায় নিজেদেরকে আরো প্রস্ফুটিত করতে চান তাদের উদ্দেশ্যেই বলছি বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর সহচর বন্ধু জনাব এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়ার কথা। এমনকি আরো কতিপয় নিলোর্ভ মানুষের ভালবাসার কথা। সকলকে সমান করে দেখার কথা, বুকে জড়িয়ে সকল ভেদাভেদের অবসান ঘটিয়ে মানবতার এবং বিশ্বস্ততার কথা এবং একসঙ্গে সকলের কল্যাণে কাজ করার কথা। যদিও সেই সভ্যতার প্রস্ফুটিত গোলাপটি আজও জনতার সামনে পরিপূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। আমাদেরকে তাদের সেই অনুপ্রেরণা এবং প্রচেষ্টাকে পরিচর্যার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করতে হবে।
জনাব সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কোলকাতা ইসলামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া বন্ধু, তারপরে ব্যক্তিগত আইন পরামর্শক এবং দলীয় সহকর্মী যা আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে জেনেছি। তিনি তাঁর দায়িত্ব সততা, বন্ধুত্ব অটুট রেখেছিলেন পৃথিবীতে জীবদ্দশাকালীন সময়ে। এখন তাঁর উত্তরসূরী আনিছুল হক সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে চক্রান্তের মাধ্যমে খুন করে খুনী মোস্তাক একসময় প্রয়াত জনাব এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেবকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং এর পক্ষাবলম্বন ছেড়ে মোস্তাক মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে। সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি এর তিব্র প্রতিবাদ করে গেছেন এবং সেই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য মামলাটি শুরু করেছিলেন এবং সেই মামলায় জনাব আনিছুল হক চুড়ান্ত বিচারের রায় কার্যকর এর মাধ্যমে যোগ্য জবাব বর্তমান মোস্তাক অনুসারীদেরকে দিয়েছেন। এই হল বিশ্বস্ততা এবং সম্পর্ক। জনাব এবি সিদ্দিক সাহেব তাঁর জীবদ্দশার শেষ দিন পর্যন্ত সেই বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখেছেন। মুজুরকে যেমন বুকে জড়িয়েছেন তেমনি সমাজের উচু শ্রেণীর মানুষদেরকেও জড়িয়েছেন। নিরীক্ষণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ এবং এম আর আক্তার মুকুল, বার্ড প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ সহ আরো অনেকে আজও সেই সম্পর্ক এবং ভালবাসার বন্ধনকে প্রাধান্য দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের হয়ত পর্দার সামনে বেশী দেখা যায় না বরং পর্দার পিছনে থেকেই কাজ করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। এই নিরহংকার এবং নির্লোভ মানুষদেরকে কি প্রচারনায় এনে নতুন সভ্যতার গাথুনী হিসেবে ব্যবহার করা যায় না? একটি মজবুত বৃত্তির জন্য যা দরকার তার প্রয়োজনেই তো ঐ সকল মানুষদের অবদানগুলি এবং নি:স্বার্থ কাজগুলি সামনে আনা দরকার। এখানে খুবই নগন্য অংশ উল্লেখ করা হলো বিস্তারিততো তাদের জীবন ইতিহাসেই রয়েছে।
বর্তমান ডিজিটাল সভ্যতার সঙ্গে শ্রমীক ক্লেশ বা বিদ্ধেশ সৃষ্টি না করে কিভাবে একিভুত করে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই চেষ্টাই যেন হয় আমাদের আগামীর চাওয়া ও পাওয়া। নেতা-কর্মী; কর্মকর্তা- কর্মচারী সকলেই মিলেমিলে একযোগে এই নতুন সভ্যতাকে বিনির্মান করি। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলে সহবস্থানে সার্বিক কল্যাণের তরে এগিয়ে যাই। তাহলেই আমাদের সকল বন্দিদশার অবসান হবে এবং মানুষ হবে পরাধিনতার শৃংখল মুক্ত; মানবতা ফিরে পাবে আশরাফুল মাখলুকাত এর পরিপূর্ণ মর্যাদা। আসুন শ্রমীক এবং সভ্যতাকে একসুত্রে গেথে তুলি আগামী ডিজিটাল সভ্যতার কল্যানে।
এই লিখা কাউকে আঘাত বা ছোট করার জন্য নয় বরং ভুল শুধরিয়ে সচেতন হয়ে যার যার দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে। আগামী দিনে আরো কোন ক্ষুদ্র বিষয়ের আলোকপাত হবে নবদিগনের সুচনায় ডিজিটাল সভ্যতার কল্যাণে। সবাই ভাল থাকুন এবং ভাল রাখুন।