তাজুল ইসলাম॥ জান্নাতুল মাওয়া রিমুর বয়স এক বছর হল একদিন আগে। এখনও মুখে কথা ফোঁটেনি পুরোপুরি। গুঁটিগুঁটি পায়ে ঘরময় ঘুরে বেড়ায়। আর শুধু ‘বাবা, বা-বা, বা-বা-বা’ ডাকে। মায়ের চেয়ে বাবার প্রতিই টান বেশি মেয়ের। বাবা বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে দরজায় ছুঁটে আসে। কোলেচড়ার জন্য পাগল হয়ে যায়। কাপড় বদলে নেয়ার সুযোগও দেয় না। তাকে কোলে নিয়েই বাকি কাজ করতে হয়।
মেয়েকে নিয়ে গল্পের ছলে বলছিলেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। ‘মেয়ে আমার চাঁদের টুকরা। বাবা-মা ছাড়া কিছু বোঝে না। তবে বাবার প্রতি টানটা একটু বেশিই।’ বলেই একগাল হাসলেন একদিন বাদে সত্তুরে পা দিতে যাওয়া মানুষটি।
গেল বছরের ২৮ মে স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তার কোলজুড়ে আসে রিমু। ‘মেয়েকে কোলে নিয়ে কেঁদেছিলাম সেদিন। রক্তের মায়া কী সেদিনই প্রথম বুঝতে পারি। ফুটফুটে ফুলটাকে কোলে নেয়ার পর মনে হয়েছে আমার শূন্যবুক যেন ভরে গেল।’ গলা ধরে এল বাবার। একদিন আগে ঘরোয়া আয়োজনে মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করলেন মুজিবুল-হনুফা দম্পতি। রাজ্যের ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে সময় দিয়েছেন বাবা। কোলে পিঠে রেখেছেন। কাঁধে তুলে ছবি তুলেছেন। অনেকটা সময় বাবাকে কাছে পেয়েও মেয়ের সেকি আহ্লাদ। ‘মেয়েটা বড় অভিমানী বুঝলেন। খুব অভিমানী। বাবার মতো।’ বলছিলেন মুজিবুল হক।
‘তাই নাকি?’ ‘তবে আর কী বলছি। একদিন অফিস থেকে ফিরে কোলে নিতে দেরি হলে ঠোঁট উল্টে দেয়। কোলে নিলেও এ কান্না থামে না। মুখ ঘুরিয়ে রাখে। থেমে থেমে কাঁদে। ওইটুকুন মেয়ে তার কি-না এত অভিমান!’ জন্মদিনে মেয়ের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তে কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বললেন, কোন আত্মীয় তুলে দিয়ে দিয়েছে ফেসবুকে। অনেকে শুভকামনা করেছেন। কেউ ফুটফুটে শিশুটাকে দেখে কমেন্টে লিখেছেনÑ ‘বাবার মতো মেয়ে।’ রেলমন্ত্রী নিজেই হেসে জবাব দিলেন, ‘হবে না? বাবার মেয়ে তো।’
রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিলেন জীবনের সিংহভাগ সময়। কোথা দিয়ে ৬৭টি বসন্ত জীবন থেকে কেটে গেছে বুঝতে পারেননি কুমিল্লার ছেলে মুজিবুল হক। বুঝলেন কিনা শেষান্তে এসে! আফসোসও করেন এখন। আগে জানলে এতটা বসন্ত অগোচরে চলে যেতে পারতো না। গত ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর বেশ ঘটা করেই বিয়ে করেন হনুফা আক্তার রিক্তাকে। মন্ত্রীর বিয়ে বলে কথা। অনেকে মন্তব্য করেছেন, রাজকীয় আয়োজন এমনই হয়। হনুফার বাড়ি একই জেলার চান্দিনা উপজেলার মিরাখলা গ্রামে।
ও হ্যাঁ, এই তো পালিত হলো রেলমন্ত্রীর ৭০ তম জন্মদিন। গত ৩১ মে ছিল তার জন্মদিন। বিশেষ এইদিনটি কীভাবে কাটালেন? বললেন, ‘মায়ের সঙ্গে কাটালাম।’ ‘আপনার মা বেঁচে আছেন?’ ‘মেয়ে কি আমার মা নয়?’ এই মেয়েই এখন তার ধ্যান জ্ঞান যাতে তিনি মায়ের মর্যাদা দিয়ে লালন-পালন ও যত্ম আত্মীর মাধ্যমে বড় করে তুলেছেন। আপনাকে শুভজন্মদিন মাননীয় রেলমন্ত্রী।