যৌতুকলোভী পুলিশের নির্যাতনে রক্তাক্ত গৃহবধূ

স্টাফ রিপোর্টার॥ শেরপুরে যৌতুকলোভী এক পাষন্ড পুলিশ স্বামীর নির্যাতনে রক্তাক্ত ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আশরাফুন্নাহার লোপা (১৯) নামে এক গৃহবধূ। সে সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী। রবিবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে যন্ত্রণায় কাতরানো অবস্থায় তাকে চিকিৎসাধীন পাওয়া যায়। তার ডান চোখে, কোমরের দু’পাশে, গলায়, পিঠে, পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও কালচে জখম দেখা যায়। তবে ওই ঘটনায় এখনও কোন মামলা হয়নি।
রবিবার বিকেলে আহত গৃহবধূ লোপার বেডের পাশে থাকা তার মা সেলিনা আক্তার লাকী জানান, লোপা পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫সহ বৃত্তিধারী মেধাবী শিক্ষার্থী। এর আগে আরও দু’দফায় যৌতুকলোভী এসআই শাহিন লোপাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। ওই দু’দফাতেই সে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করায় মেয়ের ভবিষ্যত জীবনের কথা চিন্তা করে তার কাছে মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কেবল যৌতুকলোভীই নয়, একজন অমানুষ প্রকৃতির লোক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে তো মেয়ের চিকিৎসা। তারপর অমানুষের বিরুদ্ধে অবশ্যই মানুষের লড়াই হবে।
জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের একমাত্র কন্যা মেধাবী শিক্ষার্থী আশরাফুন্নাহার লোপার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের মৃত ময়দান আলীর ছেলে ও পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহিনুল ইসলাম সুজনের (৩০) সাথে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শাহিন মোটা অংকের যৌতুকের দাবিতে নববধূকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। কয়েক মাস আগে এসআই শাহীন র্যাব থেকে বদলী হয়ে রাজধানী ঢাকার মিন্টু রোডস্থ পুলিশের ডিবি অফিসে যোগ দেয় এবং পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি ভাড়া বাসায় উঠে স্ত্রীকে নিয়ে। ওই অবস্থায় তার স্ত্রী শেরপুরে পিতার বাড়ি অবস্থান করার সুবাদে গত ২০ মে শাহিন ৪ দিনের ছুটিতে এসে স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ২২ মে রাতে পরিবারের অন্যান্যদের নিয়ে স্ত্রী লোপাকে টর্চ লাইটের মাধ্যমে শরীরে উপুর্যপরি আঘাত করে রক্তাক্ত করে। এক পর্যায়ে সে স্ত্রীর ডান চোখে ঘুষি দিয়ে চোখটি রক্তাক্ত করে দেয়। পরের দিন খবর পেয়ে গৃহবধূ লোপার মা-বাবাসহ পরিবারের লোকজন শাহিনের বাড়িতে পৌছলেও পাষন্ড শাহিন যৌতুকের দাবি পুর্নব্যক্ত করে। ওই অবস্থায় লোপার অভিভাবকরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নিলে শাহিন নিজেই কৌশল পাল্টিয়ে চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে তাকে শেরপুরে ভর্তি না করে সোজা ঢাকার বাসায় নিয়ে উঠে। এরপর লোপাকে যৌতুকের টাকা পাঠানো ছাড়া পিতা-মাতার সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেয়। কিন্তু পিতা-মাতার মায়া-মমতা জেগে উঠায় লোপা ৩ জুন সকালে স্বামী শাহিন বাসা থেকে বের হওয়ার পর তার মার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে দুপুরে বাসায় ফিরে শাহিন বিষয়টি টের পেয়ে যায়। এর পর পরই আহত লোপা উপর শুরু হয়ে যায় ফের বেধরক নির্যাতন। আর ওই অবস্থায় পরিবারের লোকজন ঢাকায় ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে খিলগাও থানা পুলিশের সহায়তায় প্রায় মধ্যরাতে তাকে উদ্ধার করে রবিবার ভোরে পিতার বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.