অজয় দাশ গুপ্ত॥ একটা বিষয় নিশ্চিত বাংলাদেশের প্রগতিবিরোধীদের টার্গেট এখন আওয়ামী লীগ নয়, তাদের টার্গেট শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর ষড়যন্ত্রে যখন গদি টলানো যায়নি তখন এরা জঘন্যতম পথ বেছে নিতে চাইছে। দুনিয়া এখন বদলে গেছে। সত্তর-আশি এমনকি নব্বই দশকের সেই পৃথিবী আর আজকের পৃথিবীর অনেক তফাত। তখন স্নায়ুযুদ্ধের নামে আমেরিকা বনাম সোভিয়েত ইউনিয়নের লড়াইয়ের কাল। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে কব্জা করার নামে যে কোন দেশে যে কোন উৎখাতকে সমর্থন করত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনও হয়েছে কোন কোন দেশে সকালে এক সরকার তো বিকেলে আরেক সরকার। বেশিরভাগ সামরিক জান্তাই আসতেন রক্তপাতের মাধ্যমে। আমাদের ছোট দেশটিও এর বাইরে ছিল না। জিয়াউর রহমানের আমলে শত শত ব্যর্থ অভিযান আর কাতারে কাতারে সেনা সদস্যের অপমৃত্যুর খবর আজও রহস্যের আড়ালে থেকে গেছে। শুধু তাই নয়, এমন একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছিল বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনগুলো আমাদের দেশকে দ্য ক্যু ক্যু ল্যান্ড বলতে দ্বিধা করেনি। এখন সেই কাল গত। চাইলেই সরকার হটিয়ে আমেরিকা বা পশ্চিমাদের কৃপা নিয়ে গদিতে আসা যায় না।
এ কথা আমাদের প্রতিক্রিয়াশীল চক্র জানে। তাই তারা সে চেষ্টা হয়ত আপাতত করছে না। কিন্তু তাদের বদ নজর আছে বরাবরের মতো। মোড়লদের বড় কে চাঁইয়ের হাতে-পায়ে ধরেও তারা রাজাকার যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি রহিত করতে পারেনি। জন কেরির মতো লোকও টলাতে পারেননি শেখ হাসিনাকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে জড়িতদের শাস্তি বন্ধে গাদ্দাফির চেষ্টাও সফল হয়নি। একটা বিষয় এদের মাথায় ঢোকে না, বাংলাদেশ এখন আগের জায়গা বা অবস্থানে নেই। তার শরীরে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার বহু দেশে এখন পরিবর্তনের ঢেউ। ভারত আছে বহুদূর এগিয়ে। লোকাল পলিটিক্সে ইচ্ছামতো মাথা ঘামানোর অধিকার নেই আমেরিকার। সে কারণে তারা কিছুতেই শেখ হাসিনার সরকার ও গদি টলাতে পারছে না।
কিন্তু অপচেষ্টা থেমে নেই। এখন যেটা জানা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট, মরিয়া হয়ে শেখ হাসিনাকে মারার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে এরা। আমাদের বড় দুর্ভাগ্য, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশে একদল মানুষ এখনও যাদের সংখ্যাই হয়তো খুব বেশি নয়, তারা কোন দিন স্বাধীনতা, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত মানতে পারেনি। সেই একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত এরা যখন যেটা সুবিধার মনে হয়েছে সেটার দোহাই দিয়ে এগুলোর বিরোধিতা করে আসছে। এক সময় ভারত-এক সময় হিন্দু একেক সময় আওয়ামী লীগের ধর্মদ্রোহিতা এসব আজগুবি অজুহাতে কামিয়াবি পেলেও এখন আর শিকে ছিঁড়ছে না। এখনকার মতো বাহিনী বা এজেন্সিগুলো কখনই আওয়ামীবান্ধব ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও উচ্চতা নানা বিতর্কের বাধা ডিঙিয়ে এমন জায়গায় পৌঁছেছে তার চরম দুশমনও তাঁকে সমীহ না করে পারছে না। মুশকিল এই তিনি যেভাবে যতটা এগিয়েছেন আওয়ামী লীগ ততটা পারেনি। বরং ততটা পিছিয়ে পড়ছে। এই সমীকরণ দলের জন্য যেমন সুখকর নয়, তেমনি দেশের রাজনীতির জন্যও ভয়াবহ। আমাদের যৌবনের শুরু থেকে এই সেদিন অবধি আওয়ামী লীগই ছিল এ দেশের লড়াকু দল। রাজপথে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি ছিল না কারও। বিএনপি গদিতে থেকে বাহিনী নিয়েও তাদের কাবু করতে পারত না। কিন্তু সে দল এখন ছায়া।
তাদের দুই দুবারের দেশ শাসনের ফলাফলে সুবিধাভোগী নেতাদের চাপে চাপা পড়ে গেছে ত্যাগী নেতারা। দলের নিবেদিত কর্মীরা আজ পেছনের সারিতে। সাধারণ সম্পাদকের ভাষায় কাউয়া, ফার্মের মুরগির এই দলটির নেতা ছিলেন সিংহ পুরুষ বঙ্গবন্ধু। বাঘের মতো চার নেতা। আজ দুর্বল দলের কারণে কে শত্রু কে মিত্র সেটাও বোঝা দায়। অতিসম্প্রতি ছাত্রলীগ ও গণজাগরণ মঞ্চের যে বিরোধ তাতে এটা প্রমাণিত আদর্শের সব সীমারেখাই মুছতে বসেছে। এমন কঠিন সময়ে শেখ হাসিনার ওপর দুশমনরা আরও আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবেÑ এটাই কি স্বাভাবিক নয়? ছাত্রলীগের অতীত-বর্তমান সবকিছুকে সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, আপনাদের এই আক্রোশ জামায়াত-শিবিরের বেলায় মিইয়ে আসে কেন? যখন তারা দেশজুড়ে গুপ্ত হত্যা, সন্ত্রাস আর অরাজকতা চালাচ্ছিল, যখন পুলিশ ভাইদের মাথা থেঁতলে দিচ্ছিল তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? আজ যখন সর্বব্যাপী ঐক্য আর সমঝোতা দরকার যখন শেখ হাসিনাকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন তখন কেন এই আস্ফালন?
যেভাবেই হোক নেত্রীকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। এখন ষড়যন্ত্র আকাশগামী। উড়োজাহাজের মতো অনিরাপদ অসহায় ভ্রমণ আর একটিও নেই। সেখানে তিনি বার বার ভাগ্য ও অনুগতদের বলে বেঁচে ফিরছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব খবর দেখি তার সিকি ভাগ সত্য হলেও আশঙ্কা যায় না। বলি কিভাবে নেত্রীকে আগলে রাখতে হয় সেটা তো একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময়ই তখনকার নেতারা দেখিবে দিয়ে গেছেন। এটা বলতেই হবে আওয়ামী লীগের কি হবে কি হলে কি হতে পারে জানি না, তবে শেখ হাসিনার কিছু হলে এ দেশেও মানুষের স্বপ্ন বহুকালের জন্য থেমে যাবে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার বিষয়ে শিথিলতা বা ষড়যন্ত্র বন্ধ হোক।