রাইসলাম॥ মুক্তিযোদ্ধার বাড়িটি লিখে দেয়ার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধা বাবার সার্টিফিকেট পাবেন কন্যা এমন আকুতি ফেসবুকে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তুলে ধরেন। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলার সুর্য এবং শ্রেষ্ঠ সন্তান। ফেসবুক থেকে হুবুহু তুলে ধরা হলো। এ দেশটা স্বাধীনতা লাভ করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতার বিনিময়ে। এই দেশটাকে এই মানুষগুলো মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করে স্বাধীন করেছিল কি কেবল একটা ভূখন্ড পাওয়ার জন্য? না, মাথা উচু করে স্বাধীন ভূখন্ডে মানুষের অধিকার নিয়ে বাঁচার জন্য।
আমার বাবা ১৯৭১ সালে ছিলেন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। সেই সময়ের দুরন্ত কিশোর অসংখ্য স্বপ্ন আর আশা নিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু আজ আমার বাবার একমাত্র সম্বল বাড়িটি, যেটার একমাত্র উত্তরাধিকার আমি। আমার নামে বাড়িটি দানপত্র দলিল করে লিখে দিয়ে গিয়েছেন। দূরারোগ্য কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই বগুড়া শহরে আমার বাড়িটি জবর দখল করা হয়। আমি ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষায় রিটেনে এলাউ হওয়ার পর ভাইভার জন্য আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আনতে গেলে আমাকে বলা হয়েছে, আমি যদি এই বাড়িটি লিখে দেই, তাহলে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পাব।
আমার বাড়ির দোতালায় বাসদ ভাড়া নিয়েছে অফিস রুম হিসেবে। সেই অফিসেই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ওবায়দুল হাসান ববি আমাকে ঘুসি মেরেছে। সেই সময় আমি এমনকি থানায় যাওয়ার সাহসটুকুও পাইনি। আমি বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে প্রেসক্রিপসনের উপরে পুলিশ কেস লিখে চিকিৎসা দিয়েছে। আমি আমার ভাইভা বোর্ডে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেখাতে পারিনি। ভাইভা বোর্ডে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, “আপনি কি আসলেই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান? এই প্রশ্নটা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এই দেশটা কি সত্যি আমাদের?
আমি গত মার্চ মাস থেকে থানা পুলিশ সমস্ত জায়গায় ঘুরেছি। থানার ওসি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, “ববির বিরুদ্ধে কেস দিয়ে টিকতে পারবেন?” আমি সত্যি জানি না, একজন মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, ভূমি দস্যু পুলিশের এই নির্লজ্জ প্রশ্নের উত্তর। সত্যি কি এই বাংলায় একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হেরে যাবে?