টিআইএন॥ একজীবনে তিন পুরুষ দেখেছেন এমন লোকের সংখ্যা কিন্তু নেহায়েতই কম নয়। কিন্তু জীবদ্দশায় ছয় পুরুষকে দেখেছেন এমন সৌভাগ্যবান মানুষ খুব কমই এসেছে দুনিয়ায়। এমনই এক ব্যক্তির সন্ধান মিলল বাংলাদেশের গাজীপুরে। মো: নাজিম উদ্দিন খাঁন জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৬ সালের মার্চে ১৫০ বছর ৬ মাস বয়সে পা রেখেছেন তিনি। সে হিসাবে তার জন্ম ১৮৬৫ সালে। তার জীবনদ্দশায় ছয় প্রজন্মকে দেখেছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, যার নাম গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস স্থান পেতে পারে।
বর্তমানে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণতম ব্যক্তি হলেন পোল্যান্ডের ইসরায়েল ক্রিস্টাল। তার বয়স বর্তমানে প্রায় ১১৩ বছর। কিন্তু নাজিম উদ্দিন খাঁনের বয়স ওই ব্যক্তির চেয়ে ৩৭ বছর ৬ মাসের বেশি। নাজিম উদ্দিন খাঁনের দাবি অনুযায়ী, তার জন্ম ইংরেজি আঠারশ’ শতকের মাঝামাঝিতে। বাংলায় তেরোশ’ শতকের একেবারে প্রথমদিকে। বাংলা ১৩০৪ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষদর্শী নাজিম উদ্দিন খাঁন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে তার বয়স মাত্র ২৮ বছর। নাজিম উদ্দিন খাঁনের জাতীয় পরিচয়পত্রের (আইডি নং- ৩৩১৮৬৬৬৫৪৯৪৪৭) তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১৯৮৮ সালের ৮ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। সে হিসাবে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তার বর্তমান বয়স মাত্র ২৮ বছর। অথচ নাজিম উদ্দিন খাঁনের বড় ছেলের ঘরের নাতি মৃত: হাবিজ উদ্দিন খাঁনের ছেলে সামাদ খাঁনের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্রের (আইডি নং- ৩৩১৮৬৬৬৫৪৯৪৪৮) তথ্য অনুযায়ী ৫৬ বছর।
তবে নাজিম উদ্দিন বিয়ে করেছেন মাত্র একটিই। তার স্ত্রীর নাম জয়তন বিবি। জয়তন স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই মারা গেছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর এতগুলো বছর একা একাই পার করতে হয়েছে নাজিম উদ্দিন খাঁনকে। নাজিম উদ্দিন খাঁনের ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে তিনজন জীবিত আছেন। তার ছেলে-মেয়েরা হলেন (১) মৃত: হাবিজ উদ্দিন খাঁন, (২) মৃত: রাবেয়া খাতুন, (৩) মৃত: টুকি বেগম, (৪) আ: আজিজ খাঁন (৬৯) (জীবিত), (৫) খোদেজা বেগম (জীবিত), সাহেরা বেগম (জীবিত)। তাদের প্রত্যেকের বয়স ও জন্ম সাল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
এদের মধ্যে শুধুমাত্র নাজিম উদ্দিন খাঁনের ছোট ছেলে আ: আজিজ খাঁনের বয়স জানা গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের (আইডি নং- ৩৩১৮৬৬৬৫৪৯৪৫৩) অনুযায়ী ২০১৬ সালের মার্চ মাসের ২০ তারিখে তার বয়স হয়। তার বয়স ৬৯ বছর ৭ মাস ১৭ দিন। আ: আজিজ খাঁনের দাবি তার পরিচয়পত্রে বয়স ভুল রয়েছে। তার বয়স নাকি আরো বেশি। অবশ্য নিজের দুই ভাই এখনো বেঁচে আছেন। যদিও নাজিম উদ্দিন খাঁনের বাবা দুই বিয়ে করেছিলেন। ওনার ভাইয়েরা তার বাবার ২য় ঘরের সন্তান। তারা হলেন মো: আ: গনি খাঁন (১০৮), মো: সিদ্দিক খাঁন (১০৫)। তাদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সে ভুল রয়েছে। নাজিম উদ্দিন খাঁনের ২ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে বেঁচে আছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
তার নাতি-নাতনির সংখ্যা ২২ জন। নাতি-নাতনির ঘরে পুতির সংখ্যা ১০৬ জন। পুতির ঘরে থুতির সংখ্যা ১০৭ জন। থুতির ঘরের পরের প্রজন্ম ৭ জন। মোট ২৪৮ জনের বংশধর। এলাকার অনেকেই বলেন, জন্মের পর থেকেই উনাকে বৃদ্ধ অবস্থায় দেখছি। উনি অনেক বয়স্ক মানুষ। উনার বয়সী কোনো লোক আমাদের এলাকায় বেচেঁ নেই। উনার যে বয়স গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নামটি অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। কারণ তার চেয়ে বয়স্ক মানুষ মনে হয় পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ নেই।
পোল্যান্ডের ইসরায়েল ক্রিস্টালের আগে সবচেয়ে বেশি বয়সী পুরুষ ছিলেন জাপানের ইয়াসুতারো কোদে। জানুয়ারি মাসে ১১২ বছর ৩১২ দিন বয়সে মারা যান তিনি।