‘বিএনপি করার চেয়ে বাড়ির চাকর হওয়াও সম্মানের’

রাইসলাম॥ বেগম জিয়ার সাক্ষাৎ চেয়েছেন তিনবার। দলীয় কার্যালয়ে গেছেন। গেছেন বেগম জিয়ার বাসভবনে। চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সহকারীকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন ফোনটা ‘ম্যাডাম’ কে দেবার জন্য। কিন্তু ওপ্রান্ত থেকে ফোন কেটে দেওয়া হয়েছে। দলের কোনো বিষয়েই তাঁর মতামত নেওয়া হয় না। অপমানে, গ্লানিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দল থেকে সরে যাবেন। ঘনিষ্টদের বলেছেন, ‘বিএনপি করার চেয়ে বাড়ির চাকর হওয়াও সম্মানের। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন বিএনপির কর্মকান্ড থেকে। নিপাট এই ভদ্রলোক নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়াবেন বলেই তাঁর ঘনিষ্ট স্বজনরা জানিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পদত্যাগও করবেন না। গত এক মাসে দলের কোনো কর্মকান্ডে তাঁকে দেখা যায়নি।
১৯৯৬ সালে দেশের এক ক্রান্তিকালে লে. জে. মাহবুব সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। জেনারেল নাসিমকে সেনা প্রধানের পদ থেকে রাষ্ট্রপতি অব্যাহতি দেবার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেনাবাহিনীকে তিনি শৃংখলায় ফিরিয়ে আনেন। ৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও তাঁকে সেনা প্রধানের দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে বলা হয়। অবসরে যাবার পর তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির সর্বোচ্চ সংস্থা স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনে এলে তিনি ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৭ এর জুন মাসে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে দলীয় প্রধানের পদ ছাড়তে বলেন। এর কিছুদিন পরই জিয়ার কবরের কাছে যুবদল কর্মীদের হাতে তিনি লাঞ্চিত হন। সে সময়ও বিএনপি থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। পরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অনুরোধে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বিএনপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। রাজনীতির বাইরে সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তিনি অংশগ্রহন করেন নিয়মিত।
গত কয়েক বছর ধরে বেগম জিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। গত বছর বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে শিমুল বিশ্বাস জে. মাহবুবকে সশস্ত্র বাহিনীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না বলেন। উত্তরে জেনারেল মাহবুব স্পষ্ট বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য হিসেবে এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া তাঁর কর্তব্য।’ সর্বশেষ গত এপ্রিলে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বেগম জিয়া তাঁকে প্রকাশ্যে ভৎর্সনা করেন। জেনারেল মাহবুবকে উদ্দেশ্য করেই বলেন ‘দলে কিছু এজেন্ট আছে, যারা দলের ক্ষতি করতে চায়’। এরপর আর বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ নেই তাঁর। দলের পুচকে নেতারাও তাঁকে নিয়ে টিক্কাটিপ্পনী করে।‘ এখন তাঁর বয়স হয়েছে। এসবে তিনি খুব কষ্ট পান’ এমনটাই বলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়। নিকটজনদের কাছে বলেছেন ‘রাজনীতি এখন ভদ্রলোকের কাজ নয়’। তবে, বিএনপির অন্য একটি সূত্র দাবি করেছেন, জেনারেল মাহবুব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আগামী নির্বাচনের আগে তিনি দল ভেঙ্গে আরেকটা বিএনপি করার ফন্দি আঁটছেন। সরকারের সঙ্গে গোপনে জেনারেল মাহবুব যোগাযোগ রাখছেন বলেও তাঁরা মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.