টিআইএন॥ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি ২৩টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনাদের নিয়মিত বহুবিধ কাজের কিছু বিষয়ে আমি বিশেষভাবে কর্মতৎপর হতে আহ্বান জানাচ্ছি।’ গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনাগুলো মধ্যে রয়েছে সরকারি সেবা গ্রহণে সাধারণ মানুষ যাতে কোনোভাবেই হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা, তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করা, গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষ যেন শহরমুখী না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি। এসময় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্ভাবনাময় স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমাতে উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে নিতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে সমাজ জীবনের সবখানে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরও সতর্কতার সঙ্গে এবং কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, গ্রামের মুরুব্বি, নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, নারী সংগঠক, আনসার-ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, এনজিও কর্মীসহ সমাজের সবাইকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সহজে সুবিচার প্রদান ও আদালতে মামলার জট কমাতে গ্রাম আদালতগুলোকে কার্যকর করতে হবে। জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিকাশে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে, শিক্ষার সর্বস্তরে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে হবে।
নিদের্শনায় আরও রয়েছে, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ভূমি রক্ষায় আরও সচেষ্ট হওয়া, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সার-বীজ-বিদ্যুৎ-জ্বালানি ইত্যাদির সরবরাহ নির্বিঘœ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হওয়া, ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বাজারজাতকরণ প্রতিরোধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করে এসব অনৈতিক কর্মকান্ড কঠোর হস্তে দমন করা।
প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের উদ্দেশে বলেন,‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এসডিজির সফল বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় রোধে প্রশাসনে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধানের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে শান্তি রক্ষা,পণ্য পরিবহন ও আমদানি-রফতানি নির্বিঘœ করা এবং পেশীশক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাস নিমূর্ল করতে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি নির্দেশ দেন, ভোক্তা অধিকারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। নারী উন্নয়ন নীতি সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ এবং নারী ও শিশু পাচার রোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিনোদন ও সৃজনশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে ইতিহাস চেতনা, জ্ঞানস্পৃহা ও বিজ্ঞানমনষ্কতা জাগিয়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আরও নির্দেশে দেন, কঠোরভাবে মাদক ব্যবসা, মাদক চোরাচালান ও এর অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে, ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সরকারি ভূমি রক্ষায় সজাগ থাকবে হবে, পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের পাশাপাশি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ করতে হবে। পর্যটনশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পের বিকাশে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।