হাবীব রহমান ॥ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতি আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের অংশ হিসেবে জরিপের পর জরিপ চলছে আওয়ামী লীগে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার এসব জরিপ প্রক্রিয়ায় জড়িত ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরিপে বর্তমান সংসদের ৫০ এমপি ও ১৭ মন্ত্রীর জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধস উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে অন্তত দেড়শ’ এমপির অবস্থা নাজুক। তবে প্রধানমন্ত্রীর কড়া ঘোষণার পর প্রায় সবাই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সময় দিচ্ছেন। বৈঠকে বসছেন উঠানে উঠানে। হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অনেকে মাটি কাটছেন শ্রমিকদের সঙ্গে, হাসপাতালের মেঝে পরিস্কার করছেন।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, অনেক অজনপ্রিয় নেতাদের হাতেও নৌকার টিকিট উঠবে। কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান মন্ত্রীদের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। না হলে নির্বাচনী মাঠে এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতি জেলায় অন্তত দু’একটি আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন হবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ও আলোচনা ছড়ানো এবং কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য হলেও প্রতি জেলায় অন্তত একটি আসনে প্রার্থী বদল করার সিদ্ধান্ত আছে আওয়ামী লীগ হাই কমান্ডের। সে হিসাবে ৬৪ জেলায় অন্তত ৮০ থেকে ৯০টি আসনে নতুন মুখ আসতে পারে। আবার চার থেকে পাঁচটি আসনে বর্তমান এমপিদের আসন পরিবর্তন হতে পারে। বার্ধক্যের কারণে বাদ পড়বেন বেশ কয়েক বর্তমান এমপি। বিভিন্ন জরিপে জনপ্রিয়তায় ধস যে ৫০ এমপির তারা হলেন- নীলফামারী-৩ আসনের গোলাম মোস্তফা, লালমনিরহাট-৩ আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদ (দুলাল), রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান, গাইবান্ধা-২ মাহাবুব আরা বেগম গিনি, গাইবান্ধা-৫ ফজলে রাব্বী মিয়া, ঠাকুরগাঁও-২ দবিরুল ইসলাম, দিনাজপুর-১ মনোরঞ্জন শীল গোপাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ গোলাম রব্বানী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস, নওগাঁ-৫ আবদুল মালেক, রাজশাহী-৩ আয়েন উদ্দিন, নাটোর-২ শফিকুল ইসলাম শিমুল, সিরাজগঞ্জ-৩ গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন, সিরাজগঞ্জ-৪ তানভীর ইমাম, পাবনা-১ শামসুল হক টুকু, পাবনা-২ আজিজুল হক আরজু, ঝিনাইদহ-৩ নবী নেওয়াজ, যশোর-২ মনিরুল ইসলাম, যশোর-৬ ইসমাত আরা সাদেক, মাগুরা-১ মে. জে. এটিএম আবদুল ওয়াহহাব (অব.), খুলনা-১ পঞ্চানন বিশ্বাস, খুলনা-৩ মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা-৬ শেখ মো. নূরুল হক, বরগুনা-২ শওকত হাচানুর রহমান (রিমন), বরিশাল-২ তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৫ বেগম জেবুন্নেছা আফরোজ, ভোলা-২ আলী আজম, টাঙ্গাইল-৩ আমানুর রহমান খান রানা, টাঙ্গাইল-৭ একাব্বর হোসেন, জামালপুর-২ ফরিদুল হক খান, জামালপুর-৫ রেজাউল করিম হীরা, ময়মনসিংহ-৩ নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৬ মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, নেত্রকোনা-১ ছবি বিশ্বাস, নেত্রকোনা-৩ ইফতিখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, কিশোরগঞ্জ-২ সোহরাব উদ্দিন, ঢাকা-১৪ আসলামুল হক, ঢাকা-৫ হাবিবুর রহমান মোল্লা, গাজীপুর-৩ রহমত আলী, মুন্সীগঞ্জ-১ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, নরসিংদী-৫ রাজি উদ্দিন আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৩ এমএ মান্নান, নোয়াখালী-১ এইচএম ইব্রাহীম, নোয়াখালী-৬ আয়েশা ফেরদাউস, লক্ষ্মীপুর-৪ মো. আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম-১৬ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, শরীয়তপুর-১ বিএম মোজাম্মেল হক, শরীয়তপুর-২ শওকত আলী।
শরিক ও টেকনোক্রেট বাদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মন্ত্রী ৪০ জন। এর মধ্যে জনপ্রিয়তায় ভালো অবস্থানে রয়েছেন ঝালকাঠি-২ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, ভোলা-১ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কিশোরগঞ্জ-১ জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নোয়াখালী-৫ যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দিনাজপুর-৫ আসনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-১ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, গাজীপুর-১ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, নীলফামারী-২ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জান নূর, ঢাকা-১২ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া-১ মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হক, চাঁদপুর-২ ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মাদারীপুর-২ নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে জামালপুর-৩ পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম।
কোন্দল মিটিয়ে দলীয় কর্মীদের মাঠে নামাতে পারলে জিতে আসতে পারবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, লালমনিরহাট-২ আসনে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক। বাকি মন্ত্রীদের মধ্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন কারণে বাকি মন্ত্রীদের জনপ্রিয়তায় ধস। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন মনোনয়ন বঞ্চিতও হতে পারেন।
আসন পরিবর্তন হতে পারে ঢাকা-৮ এ। বর্তমান এমপি রাশেদ খান মেননকে জোটের প্রার্থী করা হতে পারে বরিশালের কোনো আসনে। জাহাঙ্গীর কবীর নানককেও মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বরিশালের কোনো একটি আসনে। আর ভোলা-১ আসনের এমপি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার নিজের আসনে যেমন জনপ্রিয়; আরো বেশি জনপ্রিয় ভোলা-২ আসনে। নেত্রকোনায় উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের আসনে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।