ড: ইমন॥ বাত আমাদের দেশের অনেক মানুষের একটা সাধারণ সমস্যা। আমাদের শরীরে রক্তের সঙ্গে ইউরিক এসিড নামে এক প্রকার উপাদান থাকে, যার মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন অস্থি-সন্ধি বা জয়েন্টে প্রদাহ হয়, একে গাউট বা গেঁটেবাত বলা হয়।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস শরীরের যে কোনো অস্থিসন্ধিতে (বিশেষ করে বৃদ্ধাংগুলির অস্থিসন্ধি যা হাঁটার সময় ভাঁজ হয়ে যায়) গেঁটেবাত বেশি হয়। এর ফলে অস্থিসন্ধিতে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে ও ব্যথার স্থান লাল হয়ে যায় ও স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে।
চিকিৎসকের মতে, জেনেটিক কারণে ফুলে যাওয়া, কারো শরীরে ইউরিক এসিডের উৎপাদন বেশি হলে এবং কিডনি ফেইল্যুর বা ত্রুটিযুক্ত রেচনের জন্য রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন লিউকেমিয়ায় (খবঁশবসরধ বা ষবঁশধবসরধ) ভুগলে, হাইপারথায়রইডিজম বা থায়রইযডে হরমোন বেশি থাকলেও এ রোগ হতে পারে।
এছাড়া ডাই-ইউরোটিক ও পাইরাজিনামাইড ওষুধ দীর্ঘদিন সেবন, মদ্যপানের অভ্যাস, লেড পয়জনিং ও গ্লুকোজ-৬ ফসফেটের অভাব থাকলে এ রোগ দেখা দেয়।
বাত হলে পায়ের বৃদ্ধাংগুলের গোড়া ফুলে গিয়ে লাল হয়ে যায়। পায়ের পাতায় ও হাঁটতে ব্যথা হয়, পা বা পায়ের পাতা ফুলে যায়, গোড়ালি ও কব্জি ব্যথা, পায়ে গিড়া ও মাংসপেশী ফুলে যায়।
একটু বয়স হলেই আমাদের চারপাশের অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই রোগ হলে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। অথচ কয়েকটি সহজ উপায় অনুসরণ করলেই বাতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকা যায়। নিম্নে সেই উপায়গুলো আলোচনা করা হলো:
* ব্যথার জায়গায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট গরম বা ঠান্ডা ভাপ দিন। এতে আরাম পাওয়া যায়।
* অনেক্ষণ এক জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। প্রয়োজনে একঘণ্টা পর পর অবস্থান পরিবর্তন করুন।
* মেরুদন্ড ও ঘাড় নিচু করে কোনো কাজ করবেন না।
* বিছানায় শোয়া ও উঠার সময় যেকোন একদিকে কাত হয়ে হাতের ওপর ভর দিয়ে শোবেন ও উঠবেন।
* পিড়া, মোড়া বা ফ্লোরে বসবেন না। সবসময় চেয়ারে মেরুদন্ড সোজা করে বসবেন।
* নরম ফোম ও জাজিমে শোয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। আপনার জন্য উঁচু, শক্ত ও সমান বিছানাই ভালো।
* ভারী ওজন বা বোঝা বহন এড়িয়ে চলতে হবে।
* নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
* হাই হিল জুতা না পরে বরং নরম জুতা পরার অভ্যেস করুন।
* উঁচু কমোড ব্যবহার করুন। নিচু টয়লেট ব্যবহারে ব্যথা বাড়তে পারে।
* শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পেট ভরে না খেয়ে বরং অল্প অল্প করে বার বার খাবেন।