তাজুল ইসলাম হানিফ॥ চরম উৎকণ্ঠায় দিনযাপন করছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত কলেজসমুহের ছাত্রছাত্রীরা, কবে তাদের কাঙ্খিত ফল অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সরকারীকরন করা হবে, একই সাথে অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশ চলে যাবে অবসরে, তাঁদের উৎকণ্ঠা তাঁরা কি তাহলে পেশা জীবনের চরমপ্রাপ্তিটা “সরকারীকরনের সুযোগটি” পাবে না ! বিষয়টি অতীব মানবিক ও গুরুত্ত্বের সহিদ বিবেচনার দাবী রাখে যথাযথ কর্তৃপক্ষের।
এবার আসি আমার একটি একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায়, ২০০৯ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। আমি তখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার্থী। আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে খবর পেলাম সংসদ অধিবেশন উপভোগের জন্যে একটা চিঠি আসছে সংসদবিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে। আনন্দে আতœহারা আমরা সকলেই। অতঃপরৃ
মাস্টার্সের সব বন্ধুবান্ধব ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলীসহ সবাই একসাথে গাড়ী নিয়ে যখন ঢুকলাম সংসদের আঙ্গিনায়, এ ছিল এক অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মহান সংসদের ভেতরের চাকচিক্য পরিবেশ, মুগ্ধ করার মত লাইব্রেরী, দেশী বিদেশী পন্ডিতের লেখা বই, এম.পি মন্ত্রীদের পদচারনায় মন ভোলানো মিলনমেলা খুব কাছ থেকে দেখা ও কথা বলা, দেশের নাম করা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ অন্যান্যদের সান্নিধ্য পাওয়া। আরও ভাল লাগছিল যখন স্বচোখে ও খুব কাছ থেকে দেখলাম দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যগণ তুমুল বিতর্কে লিপ্ত এ জাতির শিক্ষা খাত নিয়ে। যাহা দেখে আতœতৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল মন। মনের অজান্তেই ভেজে ওঠেছিল এখানেই তো গণতন্তের সৌন্দয্য! মাগরিব নামাজের পর সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালাময়ী ভাষণ ও ভাগ্নীতায় পুরো সংসদই নয়, মুগ্ধ যেন পুরো বাংলাদেশ।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না যে, জনগণের প্রতিনিধিরা জাতির মেরুদন্ড “শিক্ষাখাত” নিয়ে ভাবেন, উন্নয়ন চান শিক্ষার মানগত, গুণগত কিংবা সংখ্যাগত ভালো মান চান সকলেই। সত্যি কথা বলতে কী, ঐ দিনের সংসদ পরিদর্শন কিংবা উপভোগের অভিজ্ঞতা কোনদিন ভুলার নয়, ভুলবোওনা। অন্তরখানি এত তৃপ্ত ছিল যে ঐ অভিজ্ঞতাটা ভাবলেই ভাল লাগে।
তাঁরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু কলেজ জাতীয়করনের ঘোষণা দেন। সর্বশেষ, ২০১৬ সালের শুরু ও মাঝামাঝিতে সকল উপজেলায় একটি করে কলেজ ও একটি করে স্কুল সরকারীকরনের ঘোষণা আসে। সারা দেশের মোট ২৮৫টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করার জন্য চূড়ান্ত করে সরকার। এ জন্য ওই সব কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে। দানপত্র দলিল (ডিড অব গিফট) পাঠাতে নির্দেশ দেয় তাঁরা, যা প্রায় ৩/৪ মাস আগেই শেষ। কিন্তু ডিড অব গিফট সম্পন্ন হওয়া কলেজসমুহে জি.ও জারিতে বিলম্ব করছে। জি.ও জারি কবে হবে কেউ যেন জানে না। সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর হাত চাই। এসব কেন হচ্ছে ? সরকারকে বিপদে ফেলতে কি-না ভাবতে হবে। তা-না হলে এত সময় তো লাগার কথা না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো এই ব্যাপারে পুরোপরি আন্তরিক। আমলাতন্ত্রের লালফিতার দৌরাতœ যেন পিছু ছাড়ছে না।
শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি আবার, জাতীয়করনকৃত কলেজের অধ্যক্ষ পরিষদের কতিপয় সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয় বুঝে অথবা না বুঝে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাথে হাত মিলিয়ে জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকদের ঘড়হ পধফৎব পদে রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে নাকি বার বার আবেদন করে যাচ্ছেন। কতটা আনইতিকেল হলে সম্ভব একবার ভাবুন!
জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকরা পূর্বের জাতীয়কৃত কলেজ শিক্ষকদের মতো শিক্ষা ক্যাডারেই থাকবে। এর অন্যথায় মেনে নেয়া হবে না। এদেশে প্রথম ১৯৭৮ সালে কলেজ সমুহ সরকারিকরণ শুরু হয় এবং এর পরে উক্ত কলেজসমূহের আত্বীকৃত শিক্ষকরা অবসরে গেলে ঐ পদে পিএসসি নিয়োগ দেয়া শুরু করে। এখন ২৮৫টি কলেজ জাতীয়করণ হলে উক্ত কলেজসমূহে প্রায় ১৫০০০ হাজার নতুন পদ সৃস্টি হবে অধ্যাপক, সহযোগি অধ্যাপক ও প্রভাষক (ক্যাডার পদ) হিসেবে এবং তারা অবসরে গেলে ঐ পদে সরাসরি বিসিএস পাসকৃতদের নিয়োগ হবে। এ ছাড়া এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ি ও নতুন অধ্যাপক, সহযোগি অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদ সৃষ্টি হবে। সেখানে কাদের নিয়োগ হবে? নিশ্চয় আত্বীকৃতরা নয়। জাতীয়কৃতদের পদ নন ক্যাডার হলে আপনারাতো সেই নন ক্যাডার পদে আসতে পারবেন না। সুতরাং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সদস্য ভাইদের বলছি, শুধু শুধু নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করা কেনো? মনে রাখবেন, শিক্ষা প্রসারে বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের অবদান অনেক অনেক বেশি। তাই বেসরকারি প্রতিস্ঠানসমূহকে অবহেলার কোনো সুযোগ নাই। তাই, ক্যাডার ননক্যাডার প্রশ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধন্ত নিবেন।
একই কলেজে ক্যাডার ও নন ক্যাডার করে ব্রিটিশ আর পাকিস্তানীদের মতো “ উরারফব ধহফ জঁষব এর চিন্তা বাদ দিতে হবে। আসুন ডিজিটাল বাংলাদেশ আর প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের মধ্যম আয়ের দেশ গঠনে সবাই একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। তাই, শিক্ষা ও শিক্ষক ব্যবস্থাকে আরো ত্বরান্বিত করার জন্য নিন্মোক্ত দাবী জানাচ্ছি ……
ক) ডিড অব গিফট হওয়া কলেজ সমূহের দ্রুত “জিও” ও “গেজেট” জারী করতে হবে।
খ) আত্তীকরণ বিধি ২০০০ কে আরো যুগোপযোগী করে এমপিও ননএমপিও সহ বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষককে পূর্বে জাতীয়করনের ধারাবাহিকতায় একসাথেই অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
গ) জিও জারীর ৩ মাসের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ৬ মাসের মধ্যে শিক্ষকদের চাকরি নিয়মিতকরন সম্পন্ন করতে হবে।
ঘ) বুনিয়াদি প্রশিক্ষনকে আরো যুগোপযোগী করে সকল শিক্ষকের জন্য তা বাধ্যতামূলক করে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
ঙ) সকল শিক্ষকদের জন্য স্ব-তন্ত্র পে-স্কেল ও ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সি দিতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাসচিব মহোদয়, মাউশির মহাপরিচালক মহোদয় সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আকুল আবেদন ও বিশেষ অনুরোধ, অসাধুদের অসৎ উদ্দেশ্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় একসাথেই প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারীকরনের “জি. ও” আসছে ঈদুল আযহার. আগেই জারি করে উৎকণ্ঠা দূর করে দেন। যাহা আমাদের ৬ লক্ষাদিক ছাত্রছাত্রী, ১৭ হাজার শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সর্বোপারি ১৬ কোটি মানুষের প্রানের দাবী।