নয়ন॥ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি ফের আওয়ামী লীগে ফিরে আসছেন, সরাসরি আওয়ামী লীগে না ফিরলেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিচ্ছে এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।
দীর্ঘ একযুগ পর গত ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন কাদের সিদ্দিকী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী। শেখ রেহানা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, ছেলে দীপ সিদ্দিকী ও মেয়ে খুশি সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য শেখ হাসিনা ও শেখ শেখ রেহানা কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানান। এসময় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে। গতকাল ১৬ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর যে কবিতাটি আবৃত্তি করেন তাতে একাধিকবার উচ্চারিত হয় কাদের সিদ্দিকীর নাম। আলোচনাসভা শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীরা কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে একযুগ পর কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাত এবং শোক দিবসের আলোচনাসভায় তার নাম বারবার উচ্চারিত হওয়ায় বিষয়টি আনন্দিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ সরকারের কিছু কর্মকান্ড নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক সমালোচনা করে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেননি কাদের সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হওয়ার পর তার বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী লাইম লাইটে টেনে আনেন শেখ হাসিনা। প্রধমে কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য করা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাকে মন্ত্রিসভার সদস্য করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায়ও রাখা হয় লতিফ সিদ্দিকীকে। কিন্তু নিউ ইয়ার্কে এক আলোচনাসভায় পবিত্র হজ্ব, তাবলীগ জামায়াত নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য রাখার দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হন লতিফ সিদ্দিকী। সংসদ সদস্য পদ হারান তিনি। মন্ত্রিসভা থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছিল টাঙ্গাইলের সিদ্দিকী পরিবার। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ, অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া, দীর্ঘ দিন নির্বাসনে থাকা, ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগ রাজনীতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সিদ্দিকী পরিবার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বিরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ সবাই তাকে ‘বাঘা কাদের’ বলে সম্বোধন করতেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের খুবই ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর যখন দিশেহারা দল, নেতৃত্ব দিশেহারা, তখন তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সেদিন তাঁর ভূমিকা দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে দারুণভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যকান্ডের পর তাঁকে অনুসরণ করে অনেক প্রতিভাবান তরুণ দেশত্যাগ করেছিলেন।
এক সময় আওয়ামী লীগের কান্ডারী হলেও বর্তমানে তাঁর অবস্থান আওয়ামী লীগের বিপরীত মেরুতে। রাজনীতিতে আদর্শগত মতপার্থক্য ও অভিমান থেকেই তিনি মূলত আওয়ামী লীগ ছেড়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের এই কান্ডারী সব মান অভিমান ভুলে আবার ঘরে ফিরে আসবেন এমনটাই প্রত্যাশা তৃণমূল নেতাকর্মীদের।