বাংলাদেশ জন্মের আগেও বন্যা ছিল আর এখন বাংলাদেশ জন্মের পর থেকেও বন্যা ছিল এবং আছে। তবে বেশ কয়েক বছর বন্যার তেমন কোন প্রকোপ দেখা দেয়নি। বিশেষ করে দেশ স্বাধীনের এক বছর পর আমার জন্ম। আর আমি বেড়ে উঠার সাথে সাথে যখন শোনা ও বোঝার বয়স হয়েছিল ঠিক তখন থেকেই বণ্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে মুখে মুখে শুনেছি। কিন্তু প্রত্যক্ষ করেছি সেই ৮৮ এবং তৎপরর্বীকালের বন্যা পরিস্থিতি। তখন যে সরকারগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় ( বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) ছিল তারাতো বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন কাজ করেছে বলে মনে পড়ে না।
বর্তমান সরকার বন্যা তথা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্য্যােগ মোকাবিলায় যথেষ্ট আন্তরিক এবং এদেশের জনগণও এখন সচেতন হয়ে সরকারের সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় থেকে সফলতা অর্জন করে যাচ্ছে যার স্বৃকৃতি আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ লাভ করেছে। বিভিন্ন দেশ তথা সরকার প্রধানগণ তাদের দেশের বিভিন্ন দুর্য্যােগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে এবং লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু আজ যখন অনেকদিন পর বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কবলে আক্রান্ত হয়েছে তখনই পরিলক্ষিত হচ্ছে বিভিন্ন ছবি এবং বিভিন্ন লিখা। লিখা ভালো এবং ছবিও ভালো কিন্তু যদি তা হয় ইতিবাচক। কিন্তু নেতিবাচক কোন কিছুই বা অতিরঞ্জিত কোন কিছুই ভাল নয়। কারণ আমাদের সমস্ত প্রচারই আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। এমন অতিরঞ্জিত কোন কিছু প্রচার করা থেকে সকল মিডিয়ার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগীতা এবং ক্ষতিপূরণ পুষিয়ে দেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও ও সেচ্ছাসেবি সংগঠনের মাধ্যমে করা হবে এবং ইতিমধ্যে হয়েছেও। তারপরও যাদের এখনও সেই সহযোগীতা বা ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি তাও অতি অল্প সময়েই পৌঁছে যাবে।
হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই এমনকি এই দুর্য্যােগ মোকাবিলা নিয়ে কোন রাজনীতি যেন না হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল উত্তরবর্গ পরিদর্শন করে বন্যার্তদের পাশে দারানোর সকলকিছু পর্যবেক্ষণ করবেন এবং আগামী দিনের সকল ক্ষতির নিশ্চয়তাটুক পাকাপোক্তভাবে দিয়ে আসবেন।
বিগত বণ্যায় যে সমস্যা ছিল এবং যেভাবে ভোক্তভোগীরা মোকাবেলা করতো ঠিক এখনো সেই একই কায়দায় মোকাবেলা করা হচ্ছে। সুতরাং ছবির দৃশ্যায়ন এবং তা প্রচারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আমার, আপনার এবং দেশের মান-সম্মান বাঁচানোর জন্যে হলেও প্রয়োজন। আশা করি সকলেই আবেগ সংবরণ করে এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দিবেন। আজকের বাংলাদেশের কোন (এই দুর্য্যােগে) বাহিরের হাত পাতা সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আর আমরা ভিক্ষুকের জাতিও নয়। তাই ছবি দেখিয়ে কারো মায়া-মমতা জাগানোর প্রয়োজন নেই। দেশীয় সক্ষমতায় আমরা এই দুর্য্যােগ মোকাবেলা করে আরেকটিবার প্রমান করব বাংলাদেশের স্বয়ৎসম্পূর্ণতা।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় যে, কোন কোন মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে বন্যা নিয়ে ভয়ানক ভয়ানক খবর। আগামী দুইশ বছরের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর ও প্রলয়ংকরী বন্যার কবলে বাংলাদেশ। আসলে কি তাই? না সবই মিথ্যা এবং গুজব। কোথায় কোথায় আবার ভয় দেখানো হচ্ছে ঢাকা শহরও তলীয়ে যাবে। কেউ কেউ আবার ইন্ডিয়ার দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে ইন্ডিয়ার সমস্ত গেইট খুলে দিয়েছে তাই বাংলাদেশ তলিয়ে যাবে। এইসব মিথ্যাগুজব রটনাকারীদের থেকে সাবধান। আর এই গুজব রটনাকারীদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করুন। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পুর্বে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্নভাবে প্রেক্ষাপট তৈরী করেছিল যা ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতীকে নিমজ্জিত করেছিল অন্ধকার গহবরে। সবাই সতর্ক হউন এবং যার যার দায়িত্ব পালন করুন।
এই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং হবে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান এর হিসাব চলছে এবং আগামীতে এর সমস্তকিছুই পুষিয়ে নেয়া হবে দেশীয় প্রযুক্তি এবং সম্বৃদ্ধির হাত ধরেই। যে সব অঞ্চলের মানুষ বন্যায় কষ্টে আছেন তাদের সঙ্গে আমরাও সহমর্মী এবং প্রয়োজনে পাশে থেকে সকল সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে যাব একযোগে আগামী উন্নত ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে।
বিভিন্ন রাজনীতি এখন গেইম খেলায় পরিণত হচ্ছে যা মিডিয়ার কল্যাণে জনগণ জানতে পারছেন প্রতিনিয়ত। তবে বন্যা যেন ঐ রাজনৈতিক গেইম খেলার বাইরে থাকে। শোকের মাসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার। সকল শোকই একাত্ম হউক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর মাহাত্বে এবং শোক ও দুর্যোগ কাঠিয়ে আমরা আরো দ্বিগুন শক্তিতে ও জ্ঞানে এবং সাহসে এগিয়ে যায় আগামীর বিনির্মানে।