নয়ন॥ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও নারী নেত্রী বেগম আইভি রহমানের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়ে গত ২৪ আগষ্ট রোজ বৃহস্পতিবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণে দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী বেগম আইভী রহমান গুরুতরভাবে আহত হন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে টানা ৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ২৪ আগস্ট তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আইভি রহমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকার কারণে সেদিনের সমাবেশে মঞ্চে থাকার কথা ছিল। খোলা ট্রাকের ওপর নির্মিত মঞ্চে তাকে আসন গ্রহণের অনুরোধও করেছিলেন অনেকে। কিন্তু কর্মীদের প্রতি ভালবাসা ও অত্যন্ত সাদামাটা চলাফেরার কারণে স্বভাবসুলভ আচরণই যেন সেইদিন মঞ্চে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাদ সাধে। হয়তো মঞ্চে থাকলে আজও অনেকের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন তিনি। আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, মিলাদ ও মোনাজাত করেন। বাদ আছর আইভী কনকর্ড টাওয়ারে (বাড়ি-২২, সড়ক-১০৮, গুলশান-২) এ মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে মরহুমার শুভাকাঙ্খীরা শরিক হয়ে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দোয়া মোনাজাত করেন।
আইভি রহমাান ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের ভৈরব শহরের চন্ডীবের গ্রামে জন্ম। তাঁর বাবা মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ। তিনি ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। আট বোন, চার ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন পঞ্চম।
ভৈরব কেভি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মো. সায়দুল্লাহ মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই আইভি ছিলেন শান্ত স্বভাবের। গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য তাঁকে বাইরে থেকে খুব কঠোর মনে হলেও আদতে তিনি ছিলেন খুবই দরদি মানুষ। যাঁরা মিশেছেন, কাছে গেছেন তাঁরাই পেয়েছেন অপরিসীম ভালোবাসা, আদর, মমতা আর সহযোগিতা।
আইভি রহমানের পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। এর পরই নামের পরে রহমান যুক্ত হয়। এ নামেই তিনি পরিচিতি পান দেশব্যাপী।
আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায় সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি তখন ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেত্রী এবং নীতিনির্ধারক ছিলেন।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন আইভি রহমান। ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।
১৯৭৫ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন আইভি। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ও সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।