ইসরাত জাহান লাকী॥ সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এবং পরে দল থেকে বের হয়ে গণফোরাম প্রতিষ্ঠাকারী আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেনের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে অশালীন গালি দেয়া এবং নিজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমান সংসদে একইভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করায় এই নিন্দা জানান তিনি।
গত সোমবার বিকালে রাজধানীতে এক আলোচনায় ড. কামালের এই সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৮ মে উচ্চ আদালতে একটি মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের অশালীন গালি দেন কামাল হোসেন। তার বক্তব্যের শব্দচয়নে আপত্তি জানালে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, ‘শাট আপ, বাস্টার্ড। ইউ টেক ইউর সিট (চুপ কর, তুমি তোমার জায়গায় বসো।)’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে আদালতে যা তা মন্তব্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে কোনো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী যে জঘন্য ভাষায় গালি দিলেন, কোনো ভদ্রলোকের সন্তান এইভাবে গালি দিতে পারেন, সেটা আমার জানা ছিল না।’ ‘ড. কামাল হোসেনের মত মানুষ অ্যাটর্নি জেনারেলকে যে গালি দিলেন অকথ্য ভাষায়, যে শব্দ তিনি বলেছেন, তা অন্তত আমার মুখ দিয়ে বলতে আমার নিজেরই লজ্জা হয়। সেই ধরনের বক্তব্য তিনি দিলেন। আজকে কোর্টের অবস্থাটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তারা, সেটাই আমার প্রশ্ন।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় ১৫২ জনের নির্বাচিত হওয়ায় ড. কামালের সমালোচনারও জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। জানান, ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেয়া একটি আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কামাল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সবথেকে অবাক লাগে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন আইনজীবী, যিনি নির্বাচনে কোনোদিন কনটেস্ট করে জিততেই পারেন নাই। জাতির পিতার ছেড়ে দেয়া সিট থেকে যাকে নির্বাচন করে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং আনকনটেস্টেড, যিনি নিজেই আনকনটেসটেড সংসদ সদস্য ছিলেন, তিনি আবার সংসদ সদস্যদের নিয়ে কথা বলেন।’
‘বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচন আইনসিদ্ধ’; অবৈধ ছিল না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, যদি প্রার্থী না দেয়, তাহলে যিনি এভাবে নির্বাচিত হয়ে আসেন, সেটা তো তার দোষ নয়। আর সে জন্য পার্লামেন্ট নিয়ে বৈধতা- অবৈধতার প্রশ্ন আসতে পারে না। কারণ নির্বাচনী আইনেই তো নির্বাচন হয়েছে। সেখানে বিএনপি ইলেকশন করেনাই।’
‘আমরা যারা ইলেকশন করেছি, যেহেতু আমরা সিট সমঝোতা করেছি, অনেক সিট সরাসরি একজন আরেকজনকে ছেড়ে দিয়েছে, সেখানে কোনো প্রার্থী ছিল না, তারা নির্বাচন করে পার্লামেন্টে এসেছে।’ ‘বিএনপি ভোটে আসেনি, সে দায় আমাদের নয়’
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির বর্জন এবং নির্বাচন ঠেকাতে সহিংস কর্মসূচি নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন না করে, তার দায়িত্ব কার? এটা তো তাদের দায়িত্ব, তাদের সিদ্ধান্ত।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০১৪ সালে ইলেকশন যাতে না হয়, অস্বাভাবিক অবস্থা যাতে সৃষ্টি হয়, সেই চেষ্টা বিএনপি করেছিল। কিন্তু তাদের ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। বিএনপি তো কথায় কথায় উত্তরপাড়ায় মুখ দিয়ে বসে থাকত, সেই উত্তরপাড়া থেকেও সাড়া পায়নি। আর সাড়া পায়নি বলে জনগণ নির্বাচন করেছে। তাদের জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাই ৫৮২টা পোলিং সেন্টার ধ্বংস করেও, স্কুল পুড়িয়ে দিয়েও, প্রিজাইডিং অফিসার হত্যা করেও নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। কারণ, জনগণে সেখানে গেছে, ভোট দিয়েছে।’
১৯৯৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির একতরফা নির্বাচন করার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেড় মাসও থাকতে পারে নাই। ১৫ ফেব্রুয়ারি ইলেকশন করেছে, ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছে, তাও জনগণের আন্দোলনের ফলে। কারণ, সে ভোট চুরি করেছিল।’ ‘আমাদের বিরুদ্ধে তো আন্দোলন করতে গিয়েছিল। বরং জনগণ উল্টো তাদেরকে যারা এই আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করেছে, জনগণই তাদেরকে বাধা দিয়ে ঘরে তুলে দিয়েছে।’