শরীফ চুয়াডাঙ্গ প্রতিনিধি॥ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল গাড়ি আর পরিপাটি পোশাকেই তাকে দেখে অভ্যস্ত পৌরসভাবাসী। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার জনপ্রিয় পৌরমেয়র ওবাইদুর রহমান জিপু যে ছদ্মবেশও নিতে জানেন, কে জানত? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই যে, ঠিকাদারদের দুর্নীতি ঠেকাতে পরিচিত বেশভূষা ছেড়ে ছদ্মবেশী হয়েছেন মেয়র জিপু। টানা ৭ দিন ধরে কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক আবার কখনোবা সাধারণ শ্রমিক বেশে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পৌর এলাকার পাড়া মহল্লায়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় চলছে ২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এই উন্নয়ন কাজে ঠিকাদাররা যাতে কোনোরকম কারচুপি বা অনিয়ম করতে না পারে সেজন্য গত এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন পৌর মেয়র।
গত সোমবার সকাল ১০টায় তিনি একজন সাধারণ শ্রমিক বেশে মহিলা কলেজ পাড়া, বুজরুকগড়গড়ি, রজনীগন্ধা সড়ক ও হাজরাহাটি গ্রামে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ তদারকি করেন পৌর মেয়র। পৌর এলাকার মহিলা কলেজ পাড়ায় চলমান উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত এক শ্রমিক জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গায়ে ছেঁড়া জামা, পরনে লুঙ্গি, মাথায় লাল কাপ পরে মুখ ঢেকে একেবারে আমাদের বেশে কাজ শুরু করেন মেয়র। প্রায় এক ঘণ্টা পর আমরা বুঝতে পারি যে সাধারণ শ্রমিকের বেশে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন পৌর মেয়র।
প্রায় একই কথা শোনা যায় হাজরাহাটি গ্রামে চলমান ড্রেন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছেও। তারা জানান, দীর্ঘক্ষণ মেয়র শ্রমিক সেজে মাথায় বালি পাথর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
কিন্তু কেন এই ছদ্মবেশ?
এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর সব চেয়ে বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে চুয়াডাঙ্গায়। ইউজিপি-৩ প্রকল্পের এই উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক বাতি উন্নয়নের কাজ। যা গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, কাজ শুরুর পর ঠিকাদাররা যাতে কোনো ভাবেই কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি না করতে পারে সে জন্যই ছদ্মবেশে ঘুরছেন তিনি। আর এ কারণেই কখনো কৃষক, কখনো রিকশা চালক ও কখনো সাধারণ শ্রমিকের বেশে হাজির হয়ে যাচ্ছেন চলমান সাইটগুলোতে।
ভোটের আগে পৌরবাসীর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তিনি বদ্ধপরিকর বলেও জানান জিপু। নিজেকে পৌরবাসীর সেবক দাবী করে তিনি বলেন, পৌরবাসীর উন্নয়ন কাজে ঠিকাদারদের অনিয়ম কোনো ভাবেই বরদাশত করা হবে না।
এদিকে, ঠিকাদারদের অনিয়ম দুর্নীতি রুখতে পৌর মেয়রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, পৌরসভার ইতিহাসে একজন জনপ্রতিনিধির এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ এর আগে কখনো দেখেননি তারা।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের এই ছদ্মবেশে ঘুরাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা সমালোচনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মেয়রের এই কর্মকান্ডকে ‘হাস্যকর’ হিসাবে দেখলেও সাধারণ মানুষ তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন ঠিকাদারদের দুর্নীতি প্রতিরোধে তার এই কর্মকান্ড দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।