তা ই নয়ন॥ রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে জোর করে ঠেলে দেয়া (পুশিং) বন্ধ করতে মায়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলসের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর বাসসের।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মানবিক বিবেচনায় আমরা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি এবং এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এজন্য মায়ানমারের প্রতি প্রবল চাপ বাড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে কোন রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে কিনা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট ভোররাত থেকে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের সংঘর্ষ হয়।
এ সংঘর্ষকে ঘিরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন জুড়ে অভিযান শুরু করলে গত ছয় দিনে প্রায় ১১০ জন নিহত হয়।
এদিকে প্রাণ বাঁচাতে অন্তত সাড়ে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইওএম।
বৈঠকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এলিস ওয়েলস সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন বলে উল্লেখ করেন প্রেসসচিব।
তিনি জানান, এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যাবাসনে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিভিন্ন খাতে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের চমৎকার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকল খাত বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
দেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনা করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোন হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারি খাতে ৪৪টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি। এর মধ্যে ২৪টির কার্যক্রম চলছে।’
নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো সকল ক্ষেত্রে দেশের নারী সমাজ উচ্চ পদে রয়েছে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের মাত্র ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দু’দেশের বাণিজ্য এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের আরএমজি পণ্যের বৃহত্তম বাজার।
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে ৭.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং ঢাকাস্থ মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন।