চারিদিকে নৈরাজ্য এবং খাঁ খাঁ কার, বিশৃংখলা, বিবাদ এবং বিবেকহীন অন্যায়, অনৈতিকতায় ভরপুর। বিশ্বের আনাচে এবং কানাচে ঘটেছে প্রতিনিয়ত অনিয়ম এবং অশান্তির পরিক্রমা। এই নৈরাজ্য এবং অশান্তি থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ ছোটাছুটি করে যাচ্ছে অনবরত। আমাদের পাশাপাশি দেশ মায়ানমার এর দিকে দৃষ্টি দিলে বুঝা যায় শান্তি আজ কোথায়? পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, ফিলিপাইনসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ ও আমেরীকায় যে নৈরাজ্য এবং অরাজকতা বিরাজমান এমনকি মাঝে মধ্যে অশান্তির আগুন ধাও ধাও করে জলে উঠে এবং ঐ আগুনো পুড়ে ছাড়খার হয়ে যায় শান্তি এবং শান্তিতে বসবাসকারী মানুষগুলো। এই নৈরাজ্য এবং বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তির কি কোন উপায় আছে?
সব মানুষই প্রকৃত শান্তি পাওয়ার আশায় ছুটে বেড়ায় বিভিন্ন ধর্মের অনুশাসনের কাছে এবং ধর্মের আলোকে স্ব স্ব ধর্মের সৃষ্টিকর্তা (ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান…. সহ বিভিন্ন উপাধিতে ডাকা)। ইন্ডিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ধর্মের মাধ্যমে শান্তির সন্ধান না পেয়ে মুখাপেক্ষি হচ্ছে বাবাদের অখড়ায়। আর বাবাদের অপকর্মের লিলা খেলা যখন বেড় হয়ে আসছে তখন মানুষ আরো অশান্তি সৃষ্টি করেছে কারণ এর সঙ্গে শয়তানের যোগসাজস রয়েছে। শযতান সব সময় নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আর খোদা তায়ালা বা সৃষ্টিকর্তা শান্তি বিরাজমান রাখেন তাঁর বান্দাদের উপর।
খোদা তায়ালা কোন ধর্মের লেবাসে বা বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে চাননি। তিনি উন্মুক্ত এবং সবজ্ঞ ও সর্বব্যাপী। তাঁর ধর্ম হলো সর্ত্য আর এই সর্তের কাজ হলো নিজেকে প্রকাশ করা এবং সৃষ্টিকে মুক্তি বা নাজাত দেয়া। এই সৃষ্টিকর্তাকে যদিও সঠিকভাবে ডাকা হয়নি তবুও তিনি আমাদের প্রত্যেকের ঘরের বা রুমের দরজায় আঘাত করে যাচ্ছে; বিশেষ করে হৃদয়ের সিংহাসনের দরজার কড়া নাড়ছে যেন আমরা মন পরিবর্তন করে তাঁর সেবা ও ভালবাসায় নিমজ্জিত হয়ে আগামীর নিশ্চয়তা নিয়ে বেহেশতে যেতে পারি। সৃষ্টিকর্তা তাঁর কালামে বলেছেন, “তোমরা যারা ক্লান ও পরিশ্রান্ত এবং বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে আস, আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব, আমার বোঝা হালকা যা বয়ে বেড়ানো সহজ।” হ্যা আমরা দিকবিদীক ছোটাছোটি করেও আমাদের সৃষ্টিকর্তার নাগাল পাইনি এমনকি পাওয়ার জন্য চেষ্টায় করি কিন্তু সে চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে পাওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই।
আমাদের দেশের মানুষ এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মহা কবলে রয়েছে এবং এই অবস্থায় মানুষের দরকার একটু শান্তি। কিন্তু কি কেউ সেই শান্তিটুকু দিতে পেরেছেন? না পারেননি কারণ সৃষ্টিকর্তা যেভাবে শান্তি দিতে চান আমরা সেইভাবে নিতে চাই না। তই পরিপূর্ণ শান্তি থেকে দিন দিন আমরা বঞ্চিত হচ্ছি এবং খোদার সান্নিধ্য থেকে দুরে সরে যাচ্ছি। রাজনীতির অঙ্গনও এখন অশান্ত। বাঘ আর কচ্ছপের ঝগড়া লেগেই আছে। কে কার ক্ষমতা কখন দেখাবে সেটা নিয়ে ব্যস্ত। তারপরও আমরা একটু শান্তির খুঁজে বিভিন্ন জনের কাছে ও পথে-প্রান্তরে ছোটছুটি করে যাচ্ছি। কিন্তু শান্তির পরশ পাওয়া দুরের কথা বরং হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে সবই। এখন যুগের শেষ সময় তাই এই সময়ে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান থাকবে। এটা আল্লাহর কালামের বানী।
লোভী বা শয়তান দ্বারা পরিচালিত মানুষগুলো আজ পাগলপ্রায়। তারা যে কোন সময় যে কোন অঘটন ঘটানোর আশায় দিন গুনছে। তাদের ইচ্ছা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কে অশান্তিতে পরিণত করা। আর অশান্তির মাঝেও শান্তির রাজ্যে ফিরে আসার উত্তম ও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। শয়তানের কাজ হলো আল্লাহর কালামে কিছু যোগ ও কিছু বাদ দেয়া এবং এর সুযোগ কাজে লাগানো। কারণ প্রয়োজনের খাতিরে তারা সবই করে থাকে। এতে লাভবান কে হয় আমরা না ওরা। না আমরা কেউই লাভবান হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবো না। লাভবান হয় শয়তান। তাই শয়তানের ইচ্ছায় সবকিছু হবে তা কিন্তু নয় বরং ভাল কিছুতে শয়তান বিঘœতা সৃষ্টি করতে পারে কিন্তু তা পুনরুদ্ধার করেন একমাত্র আল্লাহ।
এই বাংলাদেশ এখন হচ্ছে ঈদুর আজহার প্রস্তুতি এবং উদযাপন করার মহড়া। এই শুভলগ্নে মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে শহর থেকে গ্রামে শিকড়ের টানে। গ্রাম থেকে শহরেও আসছে আত্মার বন্ধনের গভীরতার টানে। এই যে শহর থেকে গ্রাম এবং গ্রাম থেকে শহরে প্রত্যাবর্তন, তা কিন্তু এক পশরা শান্তির জন্যে। জানিনা সবাই শান্তি পায় কিনা। কিন্তু আমি বলতে পারি আসলে কোন শান্তি নেই বরং অশান্তির ডালপালা শুধু কান ভাড়ি করে যাচ্ছে। অশান্তি, ঝালাপালা অবস্থা থেকে মুক্তির জন্যে মূল্যবোধ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা উভয় পক্ষ খোদার দেয়া বিনামূল্যের শান্তি এবং আনন্দ বিনামূল্যেই সকলের মাঝে সমবন্টনে বিলিয়ে দিতে পারি।
আজ পবিত্র ঈদুল আযহা। এই পবিত্র দিনে আমাদের অঙ্গিকার হউক; নকল ও ভোজাল মুক্ত জীবন এবং আমাদের আমিত্ব ও মনের গভীরের পশুত্বকে পশু কোরবানীর মাধ্যমে চিরতরে বিতারিত করা। আগামী দিনে শান্তির সন্ধানের সন্ধানদাতা হিসেবে কাজ করা। শান্তিরাজ হিসেবে নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে রাখা। খুশীর দিনের খুশীটুকু আগামী দিনের পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করা। সকল অশান্তির মাঝে নিজেদেরকে বিলিয়ে দেয়া। এই অঙ্গিকারই হউক আমাদের ঐক্যের এবং সাম্যের ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের মূলমন্ত্র। সকলকে ঈদ মোবারক।