ফাহাদ বিন হাফিজ॥ সরকার পতনের একটি ‘জুডিশিয়াল ক্যু’ চেষ্টা ভেস্তে গেছে। ফাঁস হয়ে গেছে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা। ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটেছে। বিএনপি, প্রধান বিচারপতি, যুদ্ধাপরাধী এবং সুশীল সমাজের একাংশ যৌথভাবে এই বিচারিক ক্যু এর নীলনকশা প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং জন জাগরণের সৃষ্টি হওয়ায় পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। মূলত: ষড়যন্ত্রের মূখ্য কুশীলব বিচারপতি সিনহা পিছু হটেন।
ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত আপিল নিয়েই ষড়যন্ত্র গড়ে ওঠে। এই আপিলের রায় লেখায় প্রধান বিচারপতিকে সরাসরি সহায়তা করেন ড. কামাল হোসেন। রায়ের লক্ষ্য ছিল তিনটি। প্রথমত, রায়ের মাধ্যমে বর্তমান সংসদকে অবৈধ ঘোষানার পথ করে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং তৃতীয়ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন। এজন্যই রায়ের ভেতর অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ওই বিষয় গুলো আনা হয়েছিল। বিএনপিপন্থী দুজন আইনজীবী, এই রায় হবার পর তিনটি আলাদা রিট প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল সংক্রান্ত বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন তৈরিই হয়েছিল।
রিভিউ এ পরবর্তী তিন মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের সংশোধনী দেওয়ার নীলনকশা ছিল। দ্বিতীয় রিট হতো, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করার। এ সংক্রান্ত একটি রিট হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করেছিল। এটা আপিল বিভাগে নিয়ে এসে দ্রুত নিষ্পত্তিরও সব আয়োজন করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্র ছিল এরকম, আপিল বিভাগ এই সংসদকে অবৈধ বলবে এবং তিন মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করবে।
ফলে, বর্তমান সংসদ বাতিল হয়ে যাবে, বর্তমান সরকারও অবৈধ হয়ে ক্ষমতা হারাবে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে গঠিত হবে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার’, এই সরকার কয়েক বছর দেশ চালাবে। ‘আওয়ামী লীগ’ হটাও এই চিন্তা থেকে বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া এই ষড়যন্ত্রে সায় দেন। ড. কামাল হোসেন এবং ব্যরিস্টার আমীর উল ইসলাম ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মাঠে নামেন। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ও দেওয়া হয়।
কিন্তু চক্রান্তকারীরা বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি ভাবতেও পারেননি, রায়ের পর আওয়ামী লীগ এবং সরকার এভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। এরপরই তিনি ভয় পেয়ে পিছু হটেন। তাঁর সঙ্গে এনিয়ে যোগাযোগকারী দুই আইনজীবীকে তিনি একটু পরে কাজ এগুনোর পরামর্শ দেন।
বেগম জিয়া লন্ডনে গিয়ে সরকার পতনের অপেক্ষা করতে থাকেন। এদিকে, আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে দৃঢ় অবস্থান নেন। তাঁরা প্রধান বিচারপতিকে ‘রাজনৈতিক বিতর্ক’ থেকে আদালতকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন। আপিল বিভাগের একজন প্রধান বিচারপতিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘তাঁর দুরভিসন্ধির অংশীদার অন্য বিচারপতিরা নেবেন না। সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি উদ্ধারে প্রধান বিচারপতিকে বিতর্কের উর্ধ্বে থাকার পরামর্শ দেন। প্রধান বিচারপতি বুঝতে পারেন, আপিল বিভাগে তিনি একা হয়ে গেছেন। তাঁর ওপর সহকর্মী বিচারপতিদেরই আস্থা নেই। এ অবস্থায় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রিট গুলো এলে অন্য বিচারপতিরা তাঁর সঙ্গে সহমত হবেন না। বিশেষ করে, আইন সচিবের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি রিটে, হাইকোর্টে আইন সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্থগিত করলে, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির মতের বাইরে গিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন।
এভাবেই আপিল বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হারান এস কে সিনহা। বাধ্য হয়ে তিনি আতœসর্মপন করেন। ভেস্তে যায় ষড়যন্ত্র।