শেখ কামাল সুমন॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)’র অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছেও একই চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের অর্ধ শতাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছে একযোগে এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ৫টি দফার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির কূটনৈতিক উইং সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত গণহত্যা বন্ধ, মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত এবং নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রহীনতার’ ইতি ঘটাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
গণহত্যার মুখে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আপৎকালীন মানবিক সহায়তা দান এবং তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের যেকোনো প্রচেষ্টায় সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘে সবাইকে সমস্বরে সোচ্চার হওয়ার এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে জাতিসংঘের প্রতিও তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি চিঠিতে অর্ধশতাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বলেছেন, আপনি ও আপনার সরকারের উচিত জাতিসংঘের কাছে (সাধারণ অধিবেশন বা নিরাপত্তা পরিষদ, যেখানেই উচিত মনে হয়) বিষয়টি তুলে ধরা।
সম্ভাব্য সবকিছু করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি তাগিদ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ৫ দফা সুপারিশ:
চিঠিতে খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে যে ৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন সেগুলো হলো-
১. মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠন করতে হবে। যদি প্রয়োজন পড়ে জাতিসংঘের অধীনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
২. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জরুরি সহায়তা হিসেবে যেসব ত্রাণ পায়- এর ওপর থেকে সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নিতে মিয়ানমার সরকারকে তাগিদ দিতে হবে।
৩. রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং রাখাইন রাজ্যে পর্যবেক্ষণ করতে সাংবাদিক ও মানবাধিকার বিষয়ক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারকে বলতে হবে।
৪. রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে হবে।
৫. রোহিঙ্গাদের মৌলিক ও মানবিক মর্যাদা এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ অবস্থার ইতি ঘটাতে হবে।
চিঠিতে খালেদা জিয়া আরও বলেছেন, অ্যাডভাইজারি কমিশন অন রাখাইন স্টেটের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এটা অবশ্যই বুঝতে হবে যে, এগুলো হচ্ছে সময়সাপেক্ষ লক্ষ্য। কিন্তু এই মুহূর্তে সেখানে রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে এবং অবিলম্বে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভাষায় এবং সমস্বরে কথা বলার সময় এটা।
তিনি বলেন, আমরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নিষ্ক্রিয় প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারি না। আমাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে পক্ষ বেছে নিতে হবে। এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কোনো স্থানেই মানবাধিকারের বিরুদ্ধে নৃশংসতা সহ্য করা হবে না।
চিঠিতে তিনি বলেন, হলোকাস্টের পর এই বিশ্ব এমনটি আর কখনো ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি করেছিল। বসনিয়ার পর, রুয়ান্ডার পরও প্রতিশ্রুতি করা হয়েছে। কিন্তু তবুও মিয়ানমারে তা আবারও ঘটছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা জানেন যে, মিয়ানমারে একটি জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যে সম্ভাব্য গণহত্যার মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি থেকে চিরতরে নির্মূলের লক্ষ্যে এ অপরাধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এজন্য অপরাধীদের কোনো শাস্তির আওতায় আনা হবে না।