টিআইএন॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে আইনি, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দিক থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবি মনে করে, অন্যান্য দেশের তুলনায় তথ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে প্রবেশাধিকার দিয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রনয়ন, তথ্য কমিশন গঠন ও আইনের প্রয়োগ কে সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেছে এই সংস্থাটি। পাশাপাশি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রমকে ইতিবাচক হিসাবে উল্লেখ করেছে টিআইবি।
টিআইবি’র নির্বাহি পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সন্তোষজনক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পাশাপাশি সক্ষমতা ও প্রস্তুতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে।” তিনি বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬ এর উল্লেখিত লক্ষ্যসমূহ পূরণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সন্তোষজনক প্রস্তুুতি ও সক্ষমতা রয়েছে বলে গবেষণায় প্রতীয়মান হলেও বিদ্যমান ঘাটতিসমূহ বিবেচনায় বাস্তবায়ন অবকাঠামো ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয়গুলো নিরসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে এসডিজি’র মূল লক্ষ্য ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয় ’- এর ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হতে হবে।”
রোববার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ের আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
টিআইবি’র সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (গবেষনা ও পলিসি) শাহজাদা এম আকরাম এই গবেষনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এসময় টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল, অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং পরিচালক (গবেষণা ও পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬’র দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট চারটি লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে গবেষণাটি এপ্রিল-আগস্ট ২০১৭ সময়ের মধ্যে পরিচালিত হয়।
গুণগত এ গবেষণায় তথ্যের পরোক্ষ উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি, গবেষণা প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক সূচক, দেশভিত্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন, জাতীয় তথ্যভান্ডার ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ব্যবহৃত হয়েছে। মুখ্য তথ্যদাতা হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করা হয়।
গবেষনা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬’র দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন বিষয়ক লক্ষ্যগুলো অর্জনে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যথেষ্ট পরিপুষ্ট হলেও আইন প্রয়োগ ও চর্চায় দুর্বলতার কারণে লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে’।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থপাচার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও খাতভিত্তিক ঝুঁকি পর্যালোচনায় ঘাটতি এবং অর্থপাচার সংক্রান্ত মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬’র অপর একটি লক্ষ্য- ‘সকল প্রকার দুর্নীতি ও ঘুষ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করা’। গবেষণায় সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে প্রাপ্ত ১২,৫৬৮টি অভিযোগের মধ্যে ১,৫৪৩টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে ৫৪৩টি অভিযোগ প্রেরণ করা হয়। এর আগে প্রতি বছর গড়ে ১,০২০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হতো।
এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে ৩৫৯টি অবৈধ উপায়ে সুবিধা লাভ সংক্রান্ত মামলা নথিভুক্ত করার পাশাপাশি ঘুষ নেওয়ার জন্য ১৩ জনকে আটক ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবৈধ উপায়ে সুবিধা লাভ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় ৩৮৮ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগ জানানোর জন্য দুদক কর্তৃক সম্প্রতি হটলাইন চালু করা হয়েছে।
গবেষণায় দুর্নীতি ও ঘুষ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য না হওয়া, নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্যদের আর্থিক তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা না থাকা; তথ্য প্রকাশকারী কোনো সমস্যায় পড়লে তার প্রতিকার, অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য স্বচ্ছ ও কার্যকর পদ্ধতির অনুপস্থিতি এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য অবসর গ্রহণের পর একই খাতের বেসরকারি কোনো চাকরিতে যোগদানের পূর্বে কতদিন ব্যবধান থাকতে হবে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকা।