রাইসলাম॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে তিনি কোনো সহায়তা আশা করেন না। চলমান জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের এক ফাঁকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, গত সোমবার জাতিসংঘে এক বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখান থেকে বেরিয়ে যাবার সময় শেখ হাসিনা ট্রাম্পকে কয়েক মিনিটের জন্য থামিয়ে ছিলেন। জাতিসংঘের সংস্কার বিষয়ে আলোচনার জন্য ট্রাম্পের উদ্যোগে সে বৈঠকটি হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, বাংলাদেশ কেমন আছে? আমি বলেছিলাম, ভালো। তবে আমাদের একমাত্র সমস্যা মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা। কিন্তু শরণার্থীদের নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।’
শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, শরণার্থীদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান পরিষ্কার। সেজন্য রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে ট্রাম্পের সহায়তা চাওয়া কোনো কাজ হবে না। ‘যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারা শরণার্থীদের গ্রহণ করবে না। আমি তার কাছ থেকে কী আশা করতে পারি? বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে। তিনি তার মনের পরিচয় ইতোমধ্যেই দিয়েছেন। তাহলে আমি তার কাছে কেন সহযোগিতা চাইতে যাব?’ রয়টার্সকে বলছিলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ধনী রাষ্ট্র নয়। কিন্তু তারপরেও ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারে। এর বাইরে আরো পাঁচ-সাত লাখ মানুষকেও বাংলাদেশ খাওয়াতে পারবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী কর্মসূচির ওপর ১২০ দিনের স্থগিতাদেশ দেয়ার চেষ্টা করেন, অনির্দিষ্টকালের জন্য সিরীয় শরণার্থীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এছাড়াও ছয়টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ৯০ দিনের পৃথক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প সরকার।
শেখ হাসিনা রয়টার্সকে আরও বলেন, তিনি চান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মেনে নেয়া উচিত যে, রোহিঙ্গারা তার দেশের নাগরিক। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত মিয়ানমারের।
তবে হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলাপচারিতার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগ্রহী বলে জানান হোয়াইট হাউসের সে কর্মকর্তা।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান এর নেতৃত্বাধীন কমিটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার ওপর জোর দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করার পরপরই অপ্রমাণিত ‘সন্ত্রাসী’ হামলার অজুহাতে আরাকান রাজ্যে মুসলিম নিধন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি সেনাবাহিনীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। নতুন করে শুরু হওয়া গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। নতুন-পুরনো মিলে বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ এলাকায় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় পেয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
মিয়ানমার সরকার দাবি করছে, মাত্র ৪০০ রোহিঙ্গা মারা গেছে। কিন্তু বাস্তব পরিসংখ্যান এর চেয়ে অনেক বেশি বলে অনুমান করছে বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।