জয়পুরহাট প্রতিনিধি॥ জেলায় প্রশাসনিক নজরদারি শুরুর পাশাপাশি গত রবিবার থেকে বাজারে ওএমএস এর চাল বিক্রি শুরু হওয়ায় চালের মূল্য কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত পাঁচ দিনে মোটা ও চিকন চাল কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে।
গত বুধবার বিকেলে জয়পুরহাট শহরের আমতলী বাজারের নজরুল চাল ঘর, অভি ট্রেডার্স, আব্দুল্লাহ চাল ঘরসহ জেলার বিভিন্ন পাইকারি চালের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ৭০ টাকার মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজিতে। ৬৫ টাকার কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজিতে। দাম কমেছে জিরাশাইল, আঠাইশ, ষোল ও স্বর্ণা-৫ জাতের চালেরও।
জানা গেছে,‘গত রবিবার থেকে জেলা শহরে পৃথকভাবে প্রতিদিন ৫ মেট্রিক টন ওএমএস এর চাল বিক্রি করছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। ডিলারদের জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বুধবার থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলা সদরে ৩ মেট্রিক টন করে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট এলাকায় ওএমএস ডিলার সরদার কনস্ট্রাকশনের মালিক আব্দুর রহিম বলেন, ‘ওএমএসের চালের ব্যাপক চাহিদা। গত রবিবার থেকে এই চাল বিক্রি শুরু হওয়ার পর থেকে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে।’
আমতলী বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন,‘দুইদিন আগেও চালের বাজার ভীষণ গরম ছিল। কিন্তু এখন বাজারের সেই গরম ভাব আর নেই্। প্রতি দিনই দাম কমছে। প্রতি কেজি চাল ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গেছে বলে তিনি জানান।
অন্যদিকে ‘চালের মূল্য বৃদ্ধিরোধ ও সঙ্কট নিরসনে করণীয়’ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলার শীর্ষ চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ওই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী ওই বৈঠকে জেলার শীর্ষ চালকল মালিকরা অংশ নেন। বৈঠকে বাজারে চালের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া রোধ কল্পে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া মতবিনিময় সভায় মিল মালিকদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নীতিমালা মেনে চালকলে ধান-চাল মজুদ করার আহ্বান জানানো হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী, চালকল মালিক রওনকুল ইসলাম চৌধুরী, ফজুলর রহমান, সামছুল ইসলাম, আমিনুল বারি, মমতাজ মন্ডল, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ।
সঙ্কটের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শীতাকে দায়ী করে চালকল মালিকরা বলেন, ‘হাওর অঞ্চলে ধানের উৎপাদন ঘাটতি, সরকার সঠিক সময়ের মধ্যে পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশে চালের সংকট তৈরি হয়েছে।
চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, ‘ব্যবসায়ী হিসেবে ধান কিনে চাল তৈরির পর বাজারে বিক্রি করা আমাদের পেশা। এক মূহূর্তে আমাদের মিলের চাকা বন্ধ থাকে না। যদি আমরা মিল বন্ধ রাখতাম। তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে চালের সংকট সৃষ্টির অভিযোগ আসাটা প্রাসঙ্গিক হতো। বিদেশ থেকে দ্রুত চাল আমদানির মাধ্যমে এ ঘাটতি পূরণ করা না গেলে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।