চপল লন্ডন থেকে॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর এবং তার দেশে ফেরা নিয়ে সরকারি দলসহ বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন দিনে দিনে চাউর হচ্ছে। তা সত্ত্বেও চিকিৎসা শেষ না হওয়ায় এ মাসেও তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রের দাবি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, সহায়ক সরকারের রূপরেখা এবং এ নিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন, দলের কূটনৈতিক তৎপরতা এবং সাংগঠনিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রোডম্যাপ তৈরি করছেন খালেদা জিয়া। এর বাইরে আরও কয়েকটি বিষয় ফয়সালা করার পর দেশে ফিরতে চান তিনি।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী এবং তার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফলোআপ চিকিৎসার শিডিউল আছে। চিকিৎসা শেষ হলেই দেশে ফিরবেন। এ মাসে ফিরবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘দেশের এ অবস্থায় ম্যাডাম একদিনও থাকতে চান না; কিন্তু চিকিৎসা শেষ না করে দেশে ফিরতেও পারছেন না।’
এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী এবং ওআইসিভুক্ত দেশসহ মোট ৫০ দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। গত ১২ সেপ্টেম্বর একইদিনে এ চিঠি পাঠানো হয়। দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে তিনি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৫ দফার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
লন্ডন সফরের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের দাবি, মূলত চোখের অপারেশন এবং পায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন চেয়ারপারসন। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লন্ডন বিজেপির দুই নেতার সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। বিজেপির কয়েক নেতা ভারত থেকে লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করার শিডিউল ছিল; বিএনপিপ্রধান তা বাতিল করেন।
খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। জেলা কমিটি পুনর্গঠন স্থগিত আছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম প্রথমে সাড়া ফেললেও পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। খালেদা জিয়াও এবারের লন্ডন সফরে গত দুই মাসে দলীয় কর্মসূচি রাখেননি। এমনকি ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো কর্মসূচিও রাখেননি। এ সময়ে গত ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন ছিল। জন্মদিনের কোনো কর্মসূচিতে তিনি এবং তারেক রহমান অংশ নেননি। দেশেও জন্মদিনের কেক কাটা হয়নি; শুধু তার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল হয়েছে।
খালেদা জিয়া লন্ডন যাওয়ার পর বিচারক অপসারণ ক্ষমতা বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে রাজনীতিতে ঝড় ওঠে। বন্যায় ডুবে যায় দেশের ৩৫টি জেলা। ঈদের আগ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে হত্যা ও নির্যাতন সইতে না পেরে দেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে।
এ সব ঘটনার মধ্যে এবারের লন্ডন সফর নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে বিভিন্ন মহলে। তবে সরকারি দল থেকে এ সফরকে ষড়যন্ত্র বলা হচ্ছে। কেন তিনি এতদিন সেখানে- এ প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে বিএনপি থেকেও জবাব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এ সব সরকারির দলের অপপ্রচার।’ লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে- এমনটি বলেছিলেন দলের নেতারা। সে হিসাবে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ, দলের কূটনৈতিক নীতির ভবিষ্যৎ এবং কারা এ তৎপরতা চালাবেন তা নিয়ে লন্ডনে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে খালেদা জিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যাদের ওপর আস্থা রাখতে চান, তারেক রহমান তাদের সঙ্গে কাজ করতে চান না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির কৌশল নির্ধারণও হতে পারে এবারের সফরেÑ এমনটিও শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া সহায়ক সরকারের রূপরেখাও চূড়ান্ত হবে সেখানে। লন্ডন থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে এ রূপরেখা তুলে ধরবেন বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
অবশ্য খালেদা জিয়া কী করছেন, তিনি কবে দেশে ফিরবেন- এ বিষয়ে দেশে দলের অনেক নেতাই কিছু জানেন না। লন্ডন যাওয়ার আগে দলের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলেছিল, খালেদা জিয়ার এবারের সফরে দলীয় বেশকিছু সিদ্ধান্ত হবে; এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারেও কয়েকটি ‘অনানুষ্ঠানিক কর্মসূচি’ থাকবে। মালয়েশিয়া প্রবাসী এক বিএনপি নেতা এবং লন্ডনপ্রবাসী আইনজীবী নেতার মধ্যস্থতায় বিজেপির কয়েক নেতার সঙ্গে বৈঠকের শিডিউলও ঠিক হয়েছিল। কয়েকবার তারিখ পরিবর্তন করে শেষ পর্যন্ত বৈঠক বাতিল করা হয়।
একটি সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনপ্রবাসী বিজেপির দুই নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তবে তাদের কোথায় দেখা হয়েছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। বিজেপির এ দুই নেতাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ। দুজনই ব্যবসায়ী এবং তাদের বাড়ি মোদির গুজরাটে।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, বেগম জিয়া তার চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। এটি একান্তই তার ব্যক্তিগত সফর। এ নিয়ে যারা নানা কথা বলছেন, তারা আসলে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার বাংলাদেশ সফরে খালেদা জিয়া হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে দেখা করেছেন। এবারও সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার বৈঠক হবে। তবে এবারের বৈঠকটি হতে পারে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবনে। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়