ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের সিমরাইল সাতপাড়া গ্রামে মসজিদে নামাজ পড়াকে কেন্দ্র করে ৪টি বাড়িতে প্রতিপক্ষের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ফলে ওই পরিবারগুলো আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে সন্ধ্যা হলেই সম্ভ্রম রক্ষার জন্য মহিলারা গোপনে অন্য বাড়িতে গিয়ে অথবা বিলে নৌকায় রাত যাপন করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা গ্রহণ না করায় নির্যাতিতরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে মামলা করলেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, সিমরাইল সাতপাড়া গ্রামে নির্মিত মসজিদের ভুমি দান করেছেন হাজ্বী মানিক সরকার। গ্রামবাসীর অর্থায়নে এই মসজিদটি নির্মিত হলেও মসজিদের একক দাবীদার মানিক হাজ্বীর পরিবার এমন কথা ঘোষণা করায় গ্রামের খোরশেদ হাজীসহ মুসল্লীরা প্রতিবাদ করে মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে মানিক হাজীর লোকজন খোরশেদ হাজীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তার বাড়িতে এনে বেদম প্রহার করে। হাজ¦ী খোরশেদের স্ত্রী দৌড়ে এসে স্বামীকে বাঁচাতে চাইলে তাকেও বেদম প্রহার করে। খোরশেদ হাজী ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠানোর জন্য তারই ফুফাতো ভাই নজরুল ইসলাম মবিল রিক্সা ডাকতে গেলে হাজী মানিকের পালিত সন্ত্রাসীরা তাকে উপর্যুপরি প্রহার করে। হাজী মানিকের পক্ষ হয়ে জহির, উম্বর আলী, কাউছার, শাহজাহান, আব্দুল্লাহ, শাকিল, হৃদয়, নেছারসহ ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে তান্ডব চালায়। উপায়ন্তর না পেয়ে হাজী খোরশেদের আত্মীয় মেহারী ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আল-আমীন কসবা থানা পুলিশকে খবর দেয়।
তাৎক্ষনিকভাবে কসবা থানার দারোগা মনির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল হাজী মানিকের বাড়িতে গেলে হৃদরোগী হাজী মানিক পুলিশ দেখে অজ্ঞান হয়ে পরে। পরে তাকে দ্রুত কসবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ খবর পেয়ে সন্ত্রাসী চক্রটি দফায় দফায় হাজী খোরশেদ আলম, আল-আমীন, কুদ্দুস মিয়া ও ফজলু মিয়ার বাড়িতে হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। নজরুল ইসলাম মবিলের বাড়িতে হামলা চলিয়ে ব্যাপক ভাংচুর, নগদ ৫লাখ টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, দু’টি ল্যাপটপ, ২টি টেলিভিশন, ১টি রাইসকুকার, ১০টি কম্বলসহ বিপুল সংখ্যক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। নজরুল ইসলামের পুত্রবধু মিতু আক্তার (২০) কে দৌড়িয়ে পানিতে ফেলে শ্লীলতা হানি করে।
যুবলীগ নেতা আল-আমীনের বাড়ির দরজা ও গ্রিল ভেংগে সন্ত্রাসী চক্রটি ঘরে প্রবেশ করে ব্যাপক লুটপাট চালায়। তার ঘর থেকে ৪লাখ টাকা, ৬ ভরি স্বর্ণসহ ঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। আল আমীনের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নিলুফা আক্তারকে বেদম প্রহার করে তার শ্লীলতা হানি ঘটায়। এসময় আল-আমীনের ঘরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম মিয়া জানান, তিনি মসজিদের বিষয়টি মিটমাট করে দিয়েছিলেন। এরপরও এ ঘটনা নিয়ে যে বর্বরোচিত হামলা এবং লুটপাট হয়েছে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, মানিক হাজী মরে যাওয়ায় এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য পার্শ্ববর্তী গঙ্গানগর গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব মো. আইয়ুব আলী ভুইয়া জানান, যারা হামলার শিকার তারা সবাই দীর্ঘ বছর যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সংগে জড়িত। মানিক হাজী ও অন্যান্যরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছে।
অফিসার ইনচার্জ কসবা থানা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, হাজী মানিকের দুই পুত্র খোরশেদ আলম ও দেলোয়ার হোসেন তাৎক্ষণিক ওইদিন আমাদেরকে জানিয়ে ছিলেন তাদের পিতা মানিক হাজী হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করার জন্য অনুমতি নেয়ার পর একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় তারা পরবর্তিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অভিযোগ সৃষ্টি করে । ফলে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে পাঠাই। ময়নাতদন্তে তার দেহে কোন আঘাতের আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন এঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটলে আমরা সেখানে পুলিশ ক্যাম্প বসাই। তিনি আরো জানান, নির্যাতিতদের আদালতের দেয়া অভিযোগটি পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।