নজরুল ইসলাম॥ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; আর নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা নয়, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনে রাখবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এর আগে ইসির সঙ্গে বিএনপি ও অন্যান্য দলের বক্তব্যের দিকেও নজর রাখবে তারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে নিজেদের দায়িত্ব এবং আস্থা অর্জনের সেতু হিসেবে রোডম্যাপকে সামনে রেখে সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজ, ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ অগাস্ট থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। তারই অংশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে ৯ অক্টোবর, বিএনপির সঙ্গে ১৫ অক্টোবর ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৮ অক্টোবর সংলাপে বসবে নির্বাচন কমিশন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। অতীতে যেসব নেতা বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় কৌশল নির্ধারণে কাজ করেছেন, তারাই এ দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সফর শেষে দেশে ফিরলে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলটির নেতারা জানান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের মতবিনিময়ের আলোচনার দিকেও নজর রাখছে দলটি। সেখানে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো কি প্রস্তাব রাখছে, সেই বিষয়ে খোঁজ রাখছেন দলটির নেতারা। তবে বিরোধী বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে কী প্রস্তাব দেবে সেই বিষয়েও দৃষ্টি রাখছেন তারা। দলটির নেতারা বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বাইরে রেখে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ এবং নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়ার বিএনপির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে আওয়ামী লীগ।
সংবিধান অনুযায়ীই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এ সরকার শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের কাছেই চলে যাবে। সব পর্যায়ের রদবদলের দায়িত্বেও থাকবে নির্বাচন কমিশন। শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের জন্য যে যে প্রস্তাব প্রয়োজন তাই তারা দেবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারবে।
দলটির নেতারা বলছেন, সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের আগে নির্ধারিত সীমানা নির্ধারণ, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই সর্বস্তরের প্রশাসনে রদবদল, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে ‘ল ইনফোর্সিং এজেন্সি’ হিসেবে যুক্ত করার প্রস্তাবও নাকচ করে দেবে তারা।
সূত্র জানিয়েছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে আওয়ামী লীগ আলাদা বেশকিছু প্রস্তাব তুলে ধরবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংলাপে অংশ নিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, অভিন্ন পোস্টারসহ নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেবে ক্ষমতাসীন দলটি। এর মধ্যে অন্যতম থাকবে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ই-ভোটিং প্রবর্তন।
তবে ই-ভোটিং নিয়ে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার বাস্তবসম্মত হবে না বলে মনে করেন তিনি। ‘নির্বাচন কমিশনের তা ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই বলে আমি মনেকরি। তাই বিষয়টির ওপর তেমন জোর নাও দিতে পারি আমরা।’
এ ছাড়া তাদের প্রস্তাবে থাকতে পারে অভিন্ন পোস্টার, নির্বাচনী এলাকায় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জনসভার আয়োজন করা। প্রার্থীদের জামানত ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট একটি টোকেন মানি সরবরাহ।
ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাবে আরও থাকতে পারে, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগবিধি অনুযায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ। নির্বাচন কমিশনের যে বাজেট দেয়া হয় সেই বাজেট যেন তারা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারে সেই বিষয়গুলোও তাদের প্রস্তাবে থাকবে।
সেনাবাহিনী নিয়োগ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি বিবেচনা করলে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে তা হবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে, কোনোভাবেই তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দেয়ার বিধান যেন না করা হয়। এ বিষয়ে আমরা উপস্থাপন করব। সেনাবাহিনী স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক। তাই তাদের যেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে না জড়ানো হয়। এ বিষয়টি আমরা জোর দিব।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নেত্রী দেশে আসার পর আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা কোন কোন বিষয়ে আলোচনা করব সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। দলীয় সভাপতি দেশে আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তখনই বলা যাবে আমরা কোন কোন ইস্যুতে আলোচনা করব, আর আমাদের কোন কোন নেতা এ বৈঠকে অংশ নেবেন।
সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমরা আলোচনা করব। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকবে, সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রস্তাব দিবো।