সিলেট প্রতিনিধি॥ ছাত্রলীগ বলতে আগে মানুষ দুর্নীতি ও টেন্ডার বাজী এবং নেতিবাচাক মনোভাব প্রকাশ করতো। কিন্তু আসলেই কি তাই? না কতিপয় দুস্কৃতির দায় সমগ্র ছাত্রলীগের উপর বর্তানো আমাদের সকলের উচিত নয়। এইতো ছবিতে সেই জলন্ত ইতিবাচক প্রমান বহন করে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে লাখো তনুজরা।
ছবিতে আপনারা যে লোকটিকে দেখছেন তিনি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তনুজ কান্তি দেব। তিনি দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনারা হয়ত মনে করতে পারেন আহা রে বেচারার এখন কি কননি অবস্থা ! না এটা উনার করুন অবস্থা না।
উনি অতীতেও এমন ছিলেন এখনও এমন আছেন। উনি কোন শিল্পপতির সন্তান কিংবা বড় কোন নেতার আত্মীয় না হয়েও একদম সাদামাটা সাধারন পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারন করে এবং মরহুম জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে।
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের। মরহুম জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ সৎ, সাহসী এবং নির্লোভ এই মানুষটাকে চিনতে ভুল করেন নাই। তাই দীর্ঘ দায়িত্বকালীন সময়ে উনার কর্মকান্ডের কোন কলঙ্কের দাগ উনাকে স্পর্শ করে নাই। দায়ীত্বকালীন সময়ে পাজেরো জীপ চড়ে কোন শোডাউন দেন নাই, টাকার বিনিময়ে কোন কমিটির পদ পদবী বিক্রি করেন নাই। টেন্ডারবাজী কিংবা টিকাদারীও করেন নাই।
করেছেন শুধুই রাজনীতি…।
বিভিন্ন এলাকার নেতা কর্মীরা যখন সুনামগঞ্জে তনুজ কান্তির কাছে আসত তখন জিজ্ঞেস করতেন দুপুরের খাবার খাওয়া হয়েছে কিনা । না হলে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতেন এবং খাবার খেতে খেতেই শুনতেন এবং বিলটাও পরিশোধ করে দিতেন। বিদায়ের সময় জিজ্ঞেস করতে ভুলতেন না বাড়ি যাওয়ার ভাড়া আছে কিনা । অনেক কেই (যারা একটু অসচ্ছল) শ’দুয়েক টাকা হাতে ধরিয়ে দিতেন। এই লোকটার রাজনীতির সম্বল ছিল শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মাথার উপরে আব্দুস সামাদ আজাদের ছায়া।
চার দলীয় জোট সরকারের আমলে নির্যাতন মামলা হামলায় জর্জরিত হতে থাকেন প্রতিনিয়ত। তারপরেও ছুটে চলা…। শুরু হয় অপারেশন ক্লিন হার্ট, খবর আসে হিট লিস্টে তনুজ কান্তির নাম। আন্ডাগ্রাউন্ডে নিজেকে আড়াল করে যতটুকু থাকা যায় সেই চেষ্টা করে পার করলেন তৎকালীন সময়টুকু। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবারও সামনে আসেন ।
২০০৫ সনে আব্দুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর সাথে সাথে মাথার ছায়াটা সরে যায় । শুরু হয় শুধু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে পথ চলা। এরই মাঝে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারন করে । ফখরুদ্দিনের শাষনামলেও খবর আসে হিটলিস্টে তনুজ কান্তির নাম । শুরু হয় অনিশ্চিত ফেরারী জীবন । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরে আসেন তনুজ কান্তি কিন্তু ততদিনে রাজনীতিবিদদের ইমেজের বারটা বাজিয়ে দিয়েছে ফখরুদ্দিনের সরকার।
ক্লিন ইমেজ নাম নিয়ে আবির্ভূত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেন হাইব্রীড নেতারা। তার পর থেকেই হাইব্রীড আর সুবিধাভোগীদের চাপে পিষ্ট হতে থাকেন তনুজ কান্তি। ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হল ।
যুবলীগে জায়গা হল না ততদিনে । দীর্ঘ দিন পর যখন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির আলোচনা শুরু হল । সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদকের প্রস্তাবিত দুই তালিকার কোনটিতেই জায়গা হয় না তনুজ কান্তির। আমরা অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখি সামাদ আজাদের হাতে গড়া একজন ছাত্রনেতার রাজনৈতিক পরিনতি ।
বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন অনেকে অথচ সামাদ আজাদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তনুজ কান্তি সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। টাকার জন্য সততাকে বিকিয়ে দেননি। রাজনীতিকে কলুষিত করেন নি। আব্দুস সামাদ আজাদকে ছোট করেন নি।
সময় বদলায়, রাজনীতি বদলায়, নেতা বদলায় শুধু বদলায় না তনুজরা। এখান থেকেই আমাদের আদর্শীক শিক্ষা নিতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে আগামীর তরে।