রাইসলাম॥ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা তাঁর প্রথম মেয়াদের ছুটি শেষ করে ফিরছেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিনই জাপান থেকে তিনি দেশে ফেরেন। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তিনি আবার ২ অক্টোবর তিনি ছুটি নিয়ে ভারতে যাবেন। তবে প্রধান বিচারপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দ্বিতীয় ছুটির বিষয়ে এখনো কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।
তাঁরা দাবি করছেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। প্রধান বিচারপতি আগামী ৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের বেঞ্চে বসবেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এরকম অন্তত দুজন বলেছেন, ‘সব ঠিক হয়ে গেছে।’
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন লন্ডনে বসবাসরত প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। বিচারপতি সিন্হা তখন কানাডায় ছিলেন। প্রবীণ এই সাংবাদিককে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘রায় মানুষই লেখে, তাই তাতে ভুল থাকতেই পারে। ভুল সংশোধনের সুযোগ আছে।’ পরোক্ষভাবে তিনি সরকার রিভিউ করলে রিভিউ এ রায়ের বিতর্কিত মন্তব্যগুলো কাটছাট করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
বিদেশ যাবার আগে এই আশ্বাস তিনি সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং সরকার দলীয় একজন আইনজীবীকেও দিয়েছেন। সরকারের একটি অংশ তাঁর এই কথায় বিশ্বাস রাখতে পারলেও বড় অংশই তাঁকে নিয়ে সন্দিহান। এজন্য তাঁকে পূনঃবার ছুটিতে পাঠানোর পক্ষে জোরালো আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশটি।
অন্য একটি অংশ যাঁরা প্রধান বিচারপতির প্রতি নমনীয় তাঁরা চাইছেন ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতিকে দেখতে। ওই দিন আপিল বিভাগে অধঃস্তন আদালতের বিচারপতিদের আচরণ বিধির গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির তারিখ। এটি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকার মুখোমুখি অবস্থানে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিচারবিভাগ রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়।’
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, অধঃস্তন আদলতের বিচারকের আচরণ বিধি সংক্রান্ত গেজেটের ব্যাপারে সরকার আর প্রধান বিচারপতিকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিবে না। এটাই হবে প্রধান বিচারপতির জন্য অ্যাসিড টেস্ট। এতে যদি প্রধান বিচারপতি উত্তীর্ণ হন, তাহলেই সরকার ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশান দাখিল করবে। আর যদি, প্রধান বিচারপতি বিচারকদের আচরণ বিধি নিয়ে তাঁর আগের অবস্থান বহাল রাখেন, তাহলে সরকার অন্য পথে হাঁটবে।
অন্যপথটা কী, জানতে চাওয়া হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকা, আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পদ এবং রাজউকের প্লট তিনটি বিষয়ই তাঁকে সরানোর জন্য যথেষ্ট।’ সেক্ষেত্রে দুদক হয়তো প্রধান বিচারপতিকে সম্পদের বিবরণী জন্য নোটিশও পাঠাতে পারে।
তবে, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন সরকারের এরকম একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আমরা সংঘাত নয় সমঝোতার পথেই যেতে চাই। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সমঝোতার একটা পথ তৈরি হবে।’ তিনি আগামী এক সপ্তাহ ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন।