খুশী ত্রিপুরা, াঙ্গামাটি প্রতিনিধি॥ রাঙ্গামাটির ছেলে শুভঙ্কর চাকমা। ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্রগ্রাম থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স শেষ করে হন্যে হয়ে সরকারি চাকরি খুঁজছিলেন। দ্রুত চাকরি না হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল তার। এমন সময় খোঁজ পান সরকারিভাবে আউট সোর্সিং প্রশিক্ষণের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্টের। চলতি বছরের শুরুর দিকে খোঁজ নিয়ে প্রশিক্ষণে ভর্তি হন তিনি। লার্নিং এ্যান্ড আর্নিং প্রজেক্ট-ই যে শুভঙ্করের জীবনে আশির্বাদ হবে প্রশিক্ষণের সময়ে তা বুঝতে পারে নি।
প্রশিক্ষণ শেষে নিজেই আউট সোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। গত মার্চের দিকে প্রথমবার সফলতা পান তিনি। পেয়ে যান কাজের স্বীকৃতি অর্থাৎ ৩৭ হাজার টাকা। সেই যে শুরু আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বাবা-মারা যাওয়া, বড় ভাই অসুস্থ, পাহাড় ঢলে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারেনি তাকে। প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে শুধুমাত্র আউট সোর্সিং করে মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করে রাঙ্গামাটিতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শুভঙ্কর।
এ সফলতার বিষয়ে কথা হয় শুভঙ্করের সঙ্গে। শুভঙ্কর জানান, লার্নিং আর্নিং তার জীবনে আশীর্বাদ। আউট সোর্সিং করে তার জীবনে এত সফলতা আসবে তিনি কখনো ভাবেননি। বর্তমানে তিনি আত্মনির্ভরশীল। সরকারি চাকরির জন্য তার সেই দৌড়ঝাঁপ এখন আর নেই।
কিভাবে শুরু করলেন এমন প্রশ্নে শুভঙ্কর বলেন, ‘২০১৫ সালে মাস্টার্স শেষে চাকরির খোঁজা শুরু করি। দীর্ঘ ২ বছর চাকরি খোঁজে কোথাও যখন কিছু হচ্ছিল না- তখন একেবারে ভেঙ্গে পড়ি। দুই ভাই ও এক বোনের সংসারে হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন মনোবল আরো ভেঙ্গে যায়। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সরকারের এ প্রজেক্টের খোঁজ পাই। তখন রাঙ্গামাটি শহরে প্রশিক্ষণ নিই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তিনি বলেন, ‘আমার কম্পিউটার কেনার টাকাও ছিল না। মানুষের কাছ থেকে ধার করে কম্পিউটার কিনি। যখন টাকা ইনকাম শুরু করি- বাবা তখন আমাদের ছেড়ে (মৃত্যু) চলে যান। তারপরও আমি থেমে থাকিনি।’
শুভঙ্কর জানান, বর্তমানে তার ভাই অসুস্থ, কিছুদিন আগে পাহাড় ঢলে তাদের বাড়ি অনেক ক্ষতিগ্রস্থও হয়। এরপরও শুধু তার আয় দিয়ে ভালোই চলছে তাদের সংসার। বর্তমানে সংসারের পুরো খরচ চালাচ্ছেন তিনি।
বর্তমানে আউট সোর্সিং থেকে কেমন আয় হয় এমন প্রশ্নে শুভঙ্কর জানান, প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। বর্তমানে তিনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কাজ করেন। যুব সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘চাকরির পেছনে না ঘুরে আউট সোর্সিং কাজে মনোযোগ দিন। চাকরির পেছনে ঘুরতে হবে না। বাংলাদেশে আউট সোর্সিংয়ের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে যুবকদের বেকার থাকতে হবে না।’ এ প্রজেক্ট করায় সরকারকেও ধন্যবাদ দেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে সরকার সরকার লার্নিং আর্নিং প্রজক্টে শুরু করে। দেশব্যাপী বেকার যুবক যুবতীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। যার মাধ্যমে তারা ঘরে বসেই আয় করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের বলেন, ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ মানুষকে স্বাবলম্বী করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনবল বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব সুবীর চৌধুরী বলেন, স্বাধীনভাবে উপার্জন করে ভালো থাকার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তরুণরা বিদেশি মুদ্রা আয় করে নিজেরা ভালো থাকার পাশাপাশি দেশকে ভালো রাখতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই নয়, মেনটরিংসহ প্রয়োজনীয় সব রকমের সহায়তা দেওয়া হবে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নি প্রকল্পের পরিচালক মির্জা আলী আশরাফ বলেন, ‘২০১৪ সালে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ কোটি ইউএস ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।