‘ব্লু-হোয়েল’ গেইম আসক্তদের চেনার উপায়

টিআইএন॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর এবার বাংলাদেশে হানা দিলো মরণঘাতি ব্লু- হোয়েল গেম। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর এই গেমের বলি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী।

Blue Hueal game
রাশিয়ার এক তরুণ মরণঘাতি এই গেমসটি তৈরি করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইন্টারনেটে ‘মরণ নেশার’ এ গেম খেলে সারা বিশ্বে ১৩০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার পুলিশ।
সাম্প্রতিক সময়ে এই গেমসটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। এমনকি গত দু’মাস ধরে ভারতজুড়ে চলছে ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক। এরপর সম্প্রতি ঢাকার সেন্ট্রাল রোডের স্কুল পড়ুয়া মেধাবী এক কিশোরীর আত্মহত্যার পর সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ইন্টারনেটভিত্তিক গেম ‘ব্লু- হোয়েল’।
এছাড়া ইতিমধ্যে প্রাণঘাতী এই গেমে দুই জনের আসত্তির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া মরণ নেশায় আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও কয়েকজন তরুণ-তরুণী আত্মহত্যা করেছে বলে অসমর্থিত বিভিন্ন খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর এই গেমের বলি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী। রাশিয়ার এক তরুণ মরণঘাতি এই গেমসটি তৈরি করেন। ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ইন্টারনেটে ‘মরণ নেশার’ এ গেম খেলে সারা বিশ্বে ১৩০ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে রাশিয়ার পুলিশ।
ব্লু- হোয়েলে আসক্তদের চিনবেন কিভাবে:
যেসব কিশোর-কিশোরী ব্লু- হোয়েল গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদের সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনও আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় অনেককে। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে তুলতে থাকে তারা।
যে কারণে তরুণ-তরুণীরা এই গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে:
ব্লু- হোয়েলে সাধারণত অবসাদগ্রস্ত তরুণ-তরুণীরা আসক্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে গভীর রাতে বা একাকী দীর্ঘ সময় যারা ইন্টারনেটে সামাজিক মাধ্যম জগতে বিচরণ করে তারা এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার যে আগ্রহ সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফাঁদে ফেলে এর কিউরেটররা।
অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে সাহসের প্রমাণ দিতে বলা হয়। এজন্য তাদের ছোট ছোট কিছু সাহসী কাজ দিয়ে এগিয়ে নেয়া হয়। একবার এতে জড়িয়ে পড়লে আর সহসা বের হওয়ার সুযোগ থাকে না। সহজ ও নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এবং সাহস আছে কি না- এমন কথায় সাহস দেখাতে গিয়ে দিনকে দিন যুবক-যুবতীরা আকৃষ্ট হচ্ছে এই গেমে। তবে একবার এ খেলায় ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব।
ব্লু- হোয়েলের মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায়
এই মরণ ফাঁদ থেকে বাঁচার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন। সেগুলো হচ্ছে-
প্রথমতো আপনাকেই সচেতন হতে হবে। কেন আপনি অপরের নির্দেশনায় কাজ করবেন? আপনি যাকে কখনও দেখেননি, যার পরিচয় জানেন না, তার কথায় কেন চলবেন বা তার কথামতো কেন কাজ করবেন- সেটি নিজেকেই চিন্তা করতে হবে।
এরকম কোনো লিংক সামনে এলে তাকে এড়িয়ে চলতে হবে।
সমাজের তরুণ-তরুণীদের মাজে এই গেমের নেতিবাচক দিক সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে হবে।
সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে বলা।
সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ- এটা বুঝতে পারে।
সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা- সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেয়া।
কৌতূহলি মন নিয়ে এই গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার মৃত্যু।
প্রসঙ্গত, ব্লু- হোয়েল মোটেও ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য সফটওয়্যার, অ্যাপ্লিকেশন কিংবা নিছক গেম নয়। এটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিত্তিক একটি ডিপওয়ে গেম। বলা হচ্ছে, যেসব কম বয়সী ছেলে-মেয়ে অবসাদে ভোগে, তারাই অসাবধানতাবশত এই গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কোনো ক্লান্তি বা বিষন্নতা দূর করার গেম নয়। আত্মহত্যার প্রবেশ পথ মাত্র।
ব্লু- হোয়েল গেমে ৫০টি লেভেল রয়েছে। এক বা একাধিক কিউরেটর দ্বারা পরিচালিত এই গেমের শেষ লেভেলের টাস্কগুলো খুবই ভয়ংকর। তবে প্রথম দিকের লেভেল ও তার টাস্কগুলো বেশ মজার হওয়ায় এই গেমের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়েন কিশোর-কিশোরীরা। নিয়ম অনুযায়ী একবার এই গেম খেললে বের হওয়া যায় না। কেউ বের হতে চাইলেও তাদের চাপে রাখতে পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়া হয় বলে প্রচলিত আছে।
এই গেমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। যেমন ব্লেড দিয়ে হাতে তিমির ছবি আঁকা, সারা গায়ে আঁচড় কেটে রক্তাক্ত করা, কখনো ভোরে একাকি ছাদের কার্নিশে ঘুরে বেড়ানো, রেল লাইনে সময় কাটানো, ভয়ের সিনেমা দেখা ইত্যাদি। চ্যালেঞ্জ নেয়ার পর এসব ছবি কিউরেটরকে পাঠাতে হয়। ২৭তম দিনে হাত কেটে ব্লু- হোয়েলের ছবি আঁকতে হয়।
একবার এই গেম খেললে কিউরেটরের সব নির্দেশই মানা বাধ্যতামূলক। তার শেষের দিকের লেভেলে আত্মনির্যাতনমূলক বিভিন্ন টাস্ক সামনে এলেও কিশোর-কিশোরীরা এতটাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে, গেম ছেড়ে বের হতে পারে না।
তবে গেমের শেষ ধাপ অর্থাৎ ৫০তম ধাপে ইউজারদের এমন কিছু টাস্ক দেওয়া হয়, যা সম্পূর্ণ করা মানেই আত্মহত্যা। আর এর মাধ্যমেই ঘটে গেমের সমাপ্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.