ইসরাত জাহান লাকী॥ সবশেষে আবিস্কৃত হলো নাটকের শেষ দৃশ্য। আর এই দৃশ্যে প্রতিয়মান হলো নিখোঁজ হওয়ার খেলায় চ্যাম্পিয়ন ড. কামাল হোসেন। তিনি সকল কাজের কাজি এবং কাজ ফোরালে পাজি। তিনি নাটের গুরু ও কুশিলব হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন দিন দিন। তবে তার চরিত্রের কলুষতা ও পঙ্কিলতা এখন পরিস্কার হচ্ছে মানব চুক্ষর সামনে ও অন্তরালে।
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে যাঁরা প্ররোচিত করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম ড. কামাল হোসেন। ষোড়শ সংশোধনীর আপিল বিভাগের রায়ের পর সংসদ এবং রাজনৈতিক অঙ্গন যখন উত্তপ্ত, তখন ড. কামাল হোসেন হুংকার দিলেন। তিনি বললেন, ‘রায়ের একটি শব্দও বাদ দেওয়া যাবে না।’ দুই দিন পর এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে কথা বললেন। বক্তৃতায় বললেন, ‘আপনাকে সাহস রাখতে হবে, আমরা আছি আপনার সঙ্গে।’ কিন্তু তিনি যখন অসুস্থ হয়ে বাড়িতে তখন ড. কামাল কোথায়?
সুপ্রিম কোর্ট থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন, আইনজীবীদের আড্ডা থেকে চায়ের আড্ডা সর্বত্র একই প্রশ্ন, ড. কামাল হোসেন কোথায়? ড. কামাল হোসেন এখন বিদেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তাঁর ল চেম্বার জানে না তিনি কবে ফিরবেন। প্রধান বিচারপতি অসুস্থ তাঁর একটা খোঁজও তিনি গত ৮ দিনে নেননি। যাঁরা বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সহমত দেখাননি তিনি। তিনি এরকমই, এজন্যই তাঁকে তার ঘনিষ্ঠরাই বলেন ‘তাঁকে বিশ্বাস করা যায় না।’
ডা. কামালের এটিই প্রথম ঘটনা নয়। ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে গেলেন, থাকলেন। জাতির পিতা জেলে ছিলেন, তাঁর প্রহসনের বিচারের খবর বিশ্ববাসী জানতো। কিন্তু ড. কামাল তখন নিখোঁজ ছিলেন।
৭৫-এর ১৫ আগস্টের সময় ড. কামাল ছিলেন বিদেশে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ রেহানা জার্মানিতে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। শেখ রেহানা তাঁকে অনুরোধ করেন। জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদ যেন তিনি করেন। কিন্তু ড. কামাল তা করেননি।
আবার তিনি ঝাঁকের কৈ-এর মতো আওয়ামী লীগে মিশে ছিলেন। ৮৬-তে আওয়ামী লীগের গলায় রীতিমতো পাড়া দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ালেন। তারপর তিনি নিখোঁজ। এরকম সব সংকটেই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন এরকম একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, ‘গাছে তুলে দিয়ে মই সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে পারদর্শী মানুষটি হলেন ড. কামাল হোসেন। নিজের স্বার্থের জন্য তিনি সবাইকে ব্যবহার করেন। স্বার্থ শেষ হলে তিনি তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেন।
ড. কামাল হোসেন নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বহুজনকে ব্যবহার করেছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথাই ধরা যাক। ড. ইউনূসকে রাজনীতির মাঠে নামানোর অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন ড. কামাল। ইউনূসকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার ক্ষত্রেও ড. কামাল ছিলেন মূখ্য উস্কানিদাতা। কিন্তু যেই সুপ্রিম কোর্ট গ্রামীন ব্যাংকের এমডি থেকে ড. ইউনূসের অপসারণকে অবৈধ বলল। অমনি ড. কামাল নিখোঁজ হলেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল ড. কামাল হোসেনেরই পরামর্শে। এখন ড. ফখরুদ্দিন মার্কিন মুল্লুুকে পড়ে আছেন। ড. কামাল তাঁর খোঁজও নেন না। মঈন ইউ আহমেদকে ড. কামাল বলেছিলেন ‘চালিয়ে যান’। কিন্তু জেনারেল মঈন যখন দেশ ত্যাগ করেন, তখন ড. কামাল তাঁকে বিদায়ের সৌজন্যতাটুকুও দেখাননি। ড. কামালের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত হলো তার নাম বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সিনহাকে দিয়ে রায় লিখিয়ে ড. কামাল এখন আর তাঁর খোঁজ নেন না। ড. কামাল আবার নিখোঁজ। তাই অনেকে প্রশ্ন করেন, এরপর ড. কামাল কার ঘাঁড় মটকাবেন সেটাই দেখার বিষয়।