নয়ন॥ বেগম জিয়া লন্ডনে ঘুম থেকে জাগেন দুপুর ১২টা নাগাদ। কিন্তু ২ অক্টোবর তাঁকে তাঁর ছেলে জাগিয়ে তুলল সকাল ১১ টায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজে প্রধান বিচারপতির ছুটির খবর দেখে আর্তনাদ করে ওঠেন তারেক জিয়া। ঘুম থেকে ডেকে তোলেন মাকে, এরপর বেশ কিছুক্ষণ দুজনের আহাজারি, হা-হুতাশ। এরপরই তারেক ব্যস্ত হয়ে ওঠেন ফোন নিয়ে। ঢাকায় তাঁর ঘনিষ্ট আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। ফোন করেন ড. কামাল হোসেনের জামাতা ডেভিড বার্গম্যানকে। বার্গম্যান জানান, ড. কামাল হোসেন আজ (২ অক্টোবর) দেশ ছেড়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে লন্ডনে আসবেন।
বেগম জিয়া কথা বলেন সিনিয়র বিএনপি নেতার সঙ্গে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়েই কাটে তাঁদের ২ অক্টোবর। তবে রাতেই তিনি আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। তারেক জিয়া তো সবসময়ই একধাপ এগিয়ে থাকেন। তিনি নির্দেশ দিলেন, সুপ্রিম কোর্ট অচল করে দিতে হবে। আইনজীবীদের যে কোনো মূল্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি এখন কারও সঙ্গেই কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
সর্বশেষ বেগম জিয়া আজ কথা বলেছেন দু’জন আইনজীবীর সঙ্গে, তাঁদের নির্দেশ দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট বর্জন করার। আদালত যেন না চলে তা নিশ্চিত করার। কিন্তু আইনজীবীদের অধিকাংশেরই এতে সায় নেই ।
বেগম জিয়ার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন এমন দু’জন জানিয়েছেন, বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া চিন্তাও করতে পারেনি, আচমকা এরকম ছুটির বজ্রপাত হবে। কারণ সব কিছু ঠিক ঠাক ছিল। প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ বন্টনও করেছিলেন। এক নম্বর বেঞ্চে তাঁর বসারও কথা ছিল। ড. কামাল নিশ্চিত করেছিলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল রিভিউ পিটিশন তিনি তৈরি করে ফেলেছেন। সরকারের তরফ থেকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিভিউ পিটিশনের পরিণতিও নির্ধারণ করা হয়েছিল। আচমকা এই অসুখ।
বেগম জিয়া এবং তারেক দু’জনই যেন কুলকিনারা হারা হয়ে গেলেন। দীর্ঘ পরিকল্পনার নীলনকশা ভেস্তে গেল। এখন বিএনপি যদি আদালত অচল করার চেষ্টা করে তাহলে সেটাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাছাড়া ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সবার কাছেই শ্রদ্ধেয় এবং গ্রহণযোগ্য। তাঁর একটি আলাদা ইমেজ আছে। এ অবস্থায় বেগম জিয়ার দেশে ফেরা আরও দীর্ঘায়িত হবে। বিএনপির এক নেতা বললেন, ‘ড. কামালরা কখনো সংকটে থাকেন না। এই সময়ে আইনজীবী সমিতির আন্দোলনে তাঁকে সামনে রাখা যেত। কিন্তু ড. কামাল কোনো সংকটেই থাকে না।’
আবারও বিএনপির কৌশল পরাস্ত হলো। এরপর লন্ডন থেকে কী নীলনকশা তৈরি হয় সেটাই দেখার বিষয়।