তাজুল ইসলাম নয়ন॥ এই কয়েক সপ্তাহ জুরে একটি অপ্রাসাঙ্গিক সংবাদ এর পক্ষে এবং বিপক্ষে এমনকি ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে। বেশ ভালই লাগে যখন কোন একটি খারাপ বা ভাল এমনকি অপরিচিত বিষয়কে নিয়ে আমরা মিডিয়া বিশারদগণ দৌঁড়, ঝাপ ও প্রচারনায় মুখর থাকি। কেউ পক্ষে এবং কেউ এর বিপক্ষে আবার কেউ এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষনে মেতে থাকি। কি বিচিত্রই না এই পৃথিবীর যাত্রামঞ্চ। আর এই মঞ্চে আমরা পালাক্রমে অভিনয় বা পারফমেন্স করে যাচ্ছি যার যার অবস্থান থেকে। সত্যি কথা বলতে কি ঐ বিষয়গুলোর প্রচারের প্রসার ঘটিয়ে সমাজের বারোটা বাজানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারি আমরা। তবে কেউ কেউ এই বলে সান্তনা পান যে, লেখা-লেখি ও মিডিয়া প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আমি বলি ঐ জনসচেতনাতার আড়ালে ঘটে সমাজ, পরিবার ও দেশ ধ্বংসকারী মরণ নেশা বা এর সুস্পষ্ট পথ অথবা উপায় জানার উপাখ্যান।
আমি ঐ গেইমের পক্ষেও না এবং বিপক্ষেও না; কারণ সমাজে বসবাস করতে হলে ভাল মন্দ উভয়ের সঙ্গেই তাল মিলেয়ে বা খাপ খাইয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবে কোনটা ভাল এবং কোন মন্দ সেই দিকটা বোঝে এগিয়ে যেতে পারলেই ভাল হবে। ভাল মন্দ বোঝার জন্য দরকার আমাদের জ্ঞানের এমনকি সুস্পষ্ট দিকনিদের্শনার। আমরা পরিবার, সমাজ, পরিবেশ এবং দেশের কাছ থেকে সময়ের প্রয়োজনে নিজের তাগিদেই শিখি। কিন্তু সব শিক্ষার বড় শিক্ষা হল পারিবারিক শিক্ষা যা মাতা-পিতার কাছ থেকে আসে। ঐ শিক্ষাই জীবনের (সন্তানের) ভীত গড়ে দেয়। এই শিক্ষার উপর ভর করে আগামীর সকল কিছুর শুভ সুচনা হয়। বিশেষ করে ভালো ও মন্দ উভয় দিকে বোঝার জন্য যথেষ্ট হলো পারিবারিক শিক্ষা যা আমরা শৈশবেই পেয়ে থাকি।
সংশোধনের ক্ষেত্রেও একটি দৃষ্টান্ত অনুসরনীয় বা অনুকরনীয়। শৈশবের শোধরানো বিষয়গুলো নিয়েই আমরা আমাদের জীবনকে সাজিয়ে গুছিয়ে এগিয়ে যাই। পারিবারিক সম্পর্কই আমাদেরকে সৃজনশীল, সততা নির্ভর ও প্রাণখোলা হয়ে চলতে সাহায্য করে। পরিবার থেকেই মূল্যবোধ শিক্ষা শুরু হয় এবং চর্চাও শুরু হয়। দোষ খোজা রোগে আক্রান্ত না হয়ে বরং নিজের দোষ বের করে সংশোধনের চেষ্টা করা সময়ের দাবী। সন্তান লালন পালনের ক্ষেত্রে দরকার যতœ এবং ভালবাসামিশ্রীত হৃদ্যতাপূর্ণ মুল্যবোধসমপ্পন্ন সম্পর্ক। যেমন মা ও বাবা হলো সন্তানের বড় বন্ধু। এই বন্ধর অভাব; যা কোন বন্ধু বা প্রীয়তমা পুরণ করতে পারে না। তাই এখনও সময় আছে সন্তানের প্রতি যতœশীল হউন এমনকি খোলামেলা পরিবেশে সন্তানকে নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে এগিয়ে যান। তাহলে সন্তান তার মনের সকল কথা (ভাল-মন্দ) আপনাকে বলবে। কোনকিছুই গোপন করবে না। তেমনি ঠিক আমি ও আপনি আমাদের মনের সকল কথা সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা শেয়ার করব। তাহলেই সমাজে, পরিবারে, এমনকি সম্পর্কে জবাবদিহিতার/ দায়বদ্ধতার মধ্যে স্বচ্ছতা বা ট্রান্সপারেন্ট বিষয় পরিলক্ষিত হবে।
পারিবারিক স্বচ্ছতাই বন্ধুত্বের একটি প্রধান সম্মিলন। আর এই সম্মিলনের কাছে হার মানতে বাধ্য সকল অপঙ্কিলতা এবং অপসংস্কৃতির গোপনীয়তা এবং ব্লু হোয়েল গেইমের মত ধ্বংসাত্মক সকল কর্মকান্ড। আসুন আমরা সকলেই সংশোধন হই এবং সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলি। গার্ডিয়ান বা পিতা মাতা হিসেব আমরাই হই সন্তানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু যেন হয়ে উঠি সকল গোপন কথার আশ্রয়স্থল। আর এই পরিস্থিতি তৈরী হলেই আমরা আর দেখব বা শুনবনা ঐ ব্লু-হোয়েলের মত মরনঘাতি কোন কর্মকান্ডের ফল।
সকলে মিলে-মিশে প্রচার ও প্রসার না ঘটিয়ে বরং এর অগ্রসরতার পথ রুদ্ধ করে দিব আমাদের মমতাময়ী ভালবাসার বন্ধনে।