সুমন॥ সাম্প্রতিক দেশের রাজনীতি, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির করণীয়, জামায়াতের বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তসহ নিজের পারিবারিক, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক জীবন নিয়ে একান্তে কথা বলেছেন, সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি গোলাম মাওলা রনি।
শিক্ষা জীবন:-
গোলাম মাওলা রনি তার শিক্ষা জীবন নিয়ে বলেন, আমি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। শৈশব থেকে আমার মাঝে রাজনীতি করার তীব্র আর্কষণ কাজ করতো। স্থানীয় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করি। পরে বাবার কাজের কারণে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা উলানিয়া গ্রামে চলে আসি। উলানিহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকায় চলে আসি। আমি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হই। ১৯৮৮ সালে অর্নাস পাশ করি। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে মাষ্টার্স পাশ করেছি। তাছাড়া লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়া লেখা সুযোগ হয়েছিল।
সাংবাদিকতায় গোলাম মাওলা রনি:-
আমি ক্যারিয়ারের শুরুতে সংবাদপত্রের সাথে জড়িত ছিলাম। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক খবর, ইনকিলাব, চিত্র বাংলা ও আজকের কাগকে চাকরি করেছি। দেশবাংলা পত্রিকাতে স্টাফ রিপোর্টার এবং দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকায় মফস্বল বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছি। সংবাদিকতা জগতে ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছি।
বৈবাহিক জীবন:-
আমি ১৯৮৬ সালে বিবাহ করি। আমার স্ত্রী গৃহিনী। আমাদের সংসারে ২ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমার সন্তানরা বাংলা মিডিয়ামে পড়ালেখা করছে।
রাজনৈতিক জীবন:-
১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এফ রহমান হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন মধ্য দিয়েই আমার রাজনীতির যাত্রা শুরু হয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। দলীয় কোনো পদে না থাকলেও দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। ২০০১ সালে ফরিপুর-৪ আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করি। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করি। সেই নির্বাচনে বিজয় লাভ করে জনসাধারণের সেবা করার সুযোগ হয়েছিল।
বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা:-
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নমিনেশন পেপার জমা দেইনি। না দেওয়া কয়েকটা কারণ ছিলো। পাঁচ বছর এমপি থাকা অবস্থায় আমার ব্যবসা বার্ণিজ্যে প্রচন্ড লোকসানের মধ্যে পড়ে গেলাম। পারিবারিক ভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেই কারণে কিছু দিন অফ থাকা প্রয়োজন মনে করেছিলাম। এটাই মূলত কারণ ছিল। তবে গত কয়েক বছরে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠেছি।
আমি আগামী একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবো। দল যদি মনোনয়ন দেয় নির্বাচন করবো, না দিলে করবো না। আমি আমার মতো যেভাবে আছি সেই ভাবে থাকবো। তবে অন্য কোনো দল বা স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করবো না।
একাদশ জাতীয় নির্বাচন:-
একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, যেখানে রাজনীতি আছে সেখানে রাজনীতিবিদদের সম্মান আছে। রাজনীতি না থাকলে রাজনীতিবিদদের সম্মান থাকে না। ফলে একাদশ নির্বাচনটা আমি চাইবো। সেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে। এটি একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সেটি অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতা মূলক হবে। আমি চাই জনগণ তার ইচ্ছা মত নির্ভয়ে, অবাদে, কোনো প্রকার ঝামেলা না করে ভোট দিতে পারে। এটাই আমি প্রত্যাশা করি একাদশ নির্বাচনে।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির করণীয়:-
এই মুহুর্তে বিএনপির করার কিছুই নেই। শুধু অপেক্ষা করা ছাড়া। বর্তমান পরিস্থিতিটা এমন একটা অবস্থানে চলে গেছে যেটার কোনো কিছু কারো হাতে নাই। সরকার চাইলেও বিএনপির সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পারবে না। আবার বিএনপি চাইলেও সরকারের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পারবে না। অতীতে তাদের মধ্যে যে কর্মকান্ড ঘটেছে অনেকগুলো ঘাত, প্রতিঘাত বেদনা সৃষ্টি হয়ে গেছে। ফলে একটা পরিবর্তন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি ছাড়া কোনো কিছু করা বিএনপির সম্ভব নয়।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি:-
ইতিহাসের সবচেয়ে একটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক দলগুলোর ভাগ্যে শত বছরেও এরকম সুবিধাজনক অবস্থান আসে না। দল, সরকারি প্রশাসন ও বিরোধী দল সবই তাদের অনুগত। সবাই তাদেরকে ভয় পাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অবস্থা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কেউ করে নাই। বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতি এক্সট্রিম পর্যায়ে আছে। ভালো হলে সর্বোচ্চ ভালো আর যদি মন্দ করে তাহলে এর চাইতে মন্দ আর হবে না।
একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন:-
একাদশ নির্বাচনে সকল দলগুলো অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগ চাইবে যোগ্যতা সম্পূর্ণ প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার জন্য। আর সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো না আসলে এবং নির্বাচনটি যদি আগের মতো হয় তাহলে তারা দলের যোগ্য লোকদের ডাকবে না। যারা কথা কম বলবে, যারা চুপচাপ ভাবে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিবে সেই সমস্ত প্রার্থীদের ডাকবে। এখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসার উপর সবকিছু নির্ভর করছে।
জামায়াতকে নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত:-
বিএনপি জামায়াতের সাথে ঐক্যবদ্ধ আছে এবং তারা থাকবে। জামায়াত বাংলাদেশের তৃতীয় একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বিএনপির যদি ক্ষমতা থাকে ৫ আর জামায়াতের আছে ৩। তাহলে ৫ আর ৩ মিলে ৮ হয়। আর আওয়ামী লীগের আছে ৬। জামায়াতকে যদি আলাদা করে দেয় তাহলে বিএনপি অনেক নিচে চলে যাবে। আওয়ামী লীগ উপরে উঠে যাবে। তাই বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে না।
একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের করণীয়:-
আওয়ামী লীগকে কিছু করার দরকার নাই। আওয়ামী লীগকে শুধু মাত্র নিজের যে সাংগঠনিক শক্তি আছে তার উপর নির্ভর করতে হবে। বাংলাদেশের ৩৭% লোক আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগের ৩৭% ভোটের উপর ভরসা করে আরো ৫% বা ১০% ফ্লোটিং ভোট আছে এটাকে টার্গেট করে কাজ করতে হবে। তাহলে একাদশ নির্বাচনে ভালো ফলাফল করা সহজ হবে। আগামী নির্বাচনে যা হোক না কেন দলের নেতাকর্মীদের সাহস হারালে চলবে না।