আবদুল মালেক॥ আওয়ামী লীগ নেতারা প্রায়ই বলেন, বেগম জিয়া ও তারেক রহমান লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছে। ওবায়দুল কাদের সাহেবও একাধিকবার বলেছেন। ফলে এই ষড়যন্ত্র তত্বকে খাটো করে দেখার সুযোগ নাই কেননা পচাত্তরের ষড়যন্ত্র আমাদের চরম সর্বনাশ করেছে। কাজেই লন্ডনে মা-বেটা কোন ষড়যন্ত্রের ছক কষছে তা জনগন জানতে চায়।, কারন ষড়যন্ত্রের রাজনীতি একক কোন দলের ক্ষতি নয়, এই গোটা দেশের। আর তা যদি হয় নিছক বিরোধিতার জন্য বলা তবে বলবো এসব না বলে আগামী নির্বাচনের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করুন। বিএনপিকে লিফট দেওয়া বন্ধ করে শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো দলকে পুনর্গঠন করুন।
“আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে অংশগ্রহনমূলক, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ” এটি ছিল গত কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিশেষ দিক। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ে নির্বাচনী কাজ শুরুর পরামর্শও দেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সে প্রত্যাশা কতটা পূরন হয়েছে? অধিকাংশ সংসদীয় এলাকার চিত্র আশংকাজনক। স্বার্থের সংঘাত এতটাই তীব্র হয়ে উঠছে যে তা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে, প্রায়শই ঘটছে খুন-খারাবির মতো অনাকাংখিত ঘটনা। এসব ঘটনায় ভিন্ন দলের কেউ নেই, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের আভ্যন্তরীন কোন্দলই এর মূল কারন, অর্থাৎ শাসক দল নিজেই তার প্রতিপক্ষ যা আগামী নির্বাচনে দলটির সমূহ ক্ষতির কারন হতে পারে।
আমরা যে যাই বলি, বাস্তবতা হলো বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক প্লাটফর্ম এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মিলনক্ষেত্র। এরা বিশেষ করে জামায়াত অত্যন্ত সংগঠিত শক্তি এবং বিএনপি এদের আশ্রয়দাতা, রক্ষাকর্তা। এহেন বিএনপিকে বাদ দিয়ে গত নির্বাচন সংবিধানের আলোকে বৈধ হলেও সে নির্বাচন নৈতিকতার মানদন্ড উতরাতে পারেনি। ১৫৪ জন সাংসদের বিনা ভোটে নির্বিচিত হওয়া বর্তমান সরকারের গলার কাটা। এ নিয়ে অহর্নিশ খোটা শুনতে হয়। সেই উপলব্ধি থেকেই আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহন চান শেখ হাসিনা যা বাংলাদেশের আপামর জনগন ও বিশ্বের অনেক গনতান্ত্রিক দেশের চাওয়াও বটে।
কিন্তু বর্তমান সাংসদগন ও দলীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ কি আসন্ন অংশগ্রহনমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছেন? বাংলাদেশে এখন নানান কিসিমের লীগের জন্ম হয়েছে, যেদিকে চোখ যায় কেবল লীগ আর লীগ। সে সব লীগ আবার জন্মের পরপরই অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়ছে। এখন তো মাঠে বিএনপি নেই, তারা নিজেদের ঘরই সামাল দিতে পারছে না, তাহলে প্রতিদিন এত হানাহানির খবর আসছে কেন? বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দলীয় হাইকমান্ড এদের বিরুদ্ধে কার্যকরি কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে বা নিতে পারছে? প্রায় প্রতিটি স্থানে যে সব অঘটন ঘটছে সেখানে জড়িত আওয়ামী লীগের লোকজন। এসব ঘটনা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কতটা সহায়ক হবে তা শাসক দলের মূল্যায়নের সময় এসেছে।
গত দশ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিএনপিকে, জামায়াত ছাড়ার নসিহত করে আসছে। অথচ বর্তমানে খোদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে জামায়াত তোষনের। সারা দেশের টুকরো ছবিগুলো মিলালে এর সত্যতা মিলে বৈকি। আওয়ামী লীগের কাছে এমনতর আচরন প্রত্যাশিত নয়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মকান্ড নিয়ে সারাদেশে অসন্তোষ বিদ্যমান। ফরিদপুরে এক ফাসির আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পেয়ে এখন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রার্থী হতে যাচ্ছে, এগুলো সাধারন জনতা ভালো চোখে দেখে না। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দলের এমনিতেও দোষ থাকে বেশি। পান থেকে চুন খসলেই আর রক্ষা নাই। আগামী নির্বাচনের আগে এই সব ক্ষেত্রে শাসক দলের জরুরী মেরামত প্রয়োজন।
লেখক: উপ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেস।