আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ “বড় বোন, দয়া করে সাহায্য করুন, আমাদের বাঁচান- এমন আকুতি করছিলো মেয়েগুলো। আমি আমার শরীর দিয়ে মেয়েদের ঢাকার চেষ্টা করছিলাম। আমি লোকগুলোকে অনুরোধ করে বললাম, ‘কোরানের শপথ করে বলছি ওরা ভার্জিন নয়।’ আমি আল্লাহর নামে তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাই, দয়া করে এটা করোনা তোমরা। ক্ষুব্ধ হয়ে একজন এসে আমাকে আঘাত করলো আর আরেকজন আমার কাঁধে কামড় বসিয়ে দিলো। তারা আমার সৎ কন্যাকেও ধর্ষণ করলো যার বয়স মাত্র ১৮। পরে মেয়েটি মারাই গেলো। অন্য যেসব মেয়েদের ধর্ষণ করলো ওরা তাদের সবার বয়স ছিলো বিশের ঘরে। লোকগুলো ওদের ধর্ষণ করছিলো, আবার একই সময় প্রহার করছিলো। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো মেয়েদের। একের পর এক ওরাও মারা গেলো।
আমি ধর্ষকদের মুখগুলোকে দেখছিলাম এবং এক সময় বুঝলাম যে অন্তত দুজনকে আমি চিনেছি। তারা আল আলমের কাছে একটি সুন্নি আরব গ্রাম থেকে এসেছে। সেখান থেকে ওদের মতো আরও অনেকেই আইএস-র সাথে যোগ দিয়েছিলো, আবার অনেক সুন্নি আরবই আইএস-র বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলো। যাই হোক পরে তারা সবাইকে একটি গ্যারাজে ফেলে গেলো, যার তত্ত্বাবধানে ছিলো একজন বয়স্ক ব্যক্তি। আমি আমার দু বাচ্চা আর একজন তুর্কমেন নারী শিক্ষক ও তার বাচ্চা এক সাথেই ছিলাম। পরে একদিন তত্ত্বাবধায়ক বয়স্ক ব্যক্তিটি আমাদের পালানোর পরামর্শ দিলেন এবং আমাদের রাস্তা দেখিয়ে তিনি গ্যারেজে ফিরে গেলেন।
আমরা মরুভূমির পথ ধরলাম। বৃষ্টি হচ্ছিলো অনেক। পর্যাপ্ত জামাকাপড় ছিলোনা। খাবার ছিলোনা। শিক্ষিকার বাচ্চাটি আমার হাতেই মারা গেলো। পাঁচদিন পর কিরকুকের মাকতাব খালিদ এলাকায় পৌঁছলাম এবং শহরে এসে এক খালার বাসায় অবস্থান নিলাম। পরে আমার স্বামীর খোঁজ করলাম, কিন্তু পেলামনা। এ মুহূর্তে আমি শুধু সন্তানদের জন্যই বেঁচে আছি।”
আইএসের হাতে আটক থাকার সময়ের দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেয়া এই নারী ইরাকের শিয়া তুর্কমেন গোত্রের সদস্য। মূলত আইএস এর সঙ্গে জড়িত সুন্নি জিহাদিদের একটি গ্রুপের হাতে বন্দী ছিলেন তিনি। আইএস আসার আগে তিকরিতের আল আলম জেলায় বাস করতেন তারা।
নিজে শিয়া তুর্কমেন গোত্রের হলেও স্বামী ছিলেন সুন্নি আরব গোত্রের একজন ইমাম। নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বেশ মান্যগন্যও করতো বলে জানান তিনি। তিনি বলছিলেন, “শিয়া ও সুন্নি আলাদা কিছু এটা আমরা কখনোই ওভাবে ভাবিনি। কে কোন গোত্রের তাও আমরা অনেকেই জানতামনা। কেউ আমাদের মধ্যে এসব নিয়ে কথাও বলতনা। কোন ধরনের হিংসা বিদ্বেষও ছিলোনা।”
তিনি বলেন “তাদের বাসার একটি অংশ তরুণী তুর্কমেন কয়েকজন শিক্ষিকা থাকতো এবং তারা বাচ্চারা সকালে ওই শিক্ষিকাদের সাথেই স্কুলে যেতো। এক কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের মা এই নারী। তিকরিতে আইএস ঢুকে ২০১৪ সালের জুনে।
তিনি বলেন,“আমাদের সৈন্যদের আমরা সহযোগিতা করেছিলাম এবং আইএস সেটা বুঝতে পারলো। পরে এক ভোরে তারা এসে অনেককে হত্যা করলো এবং আমার স্বামীকেও নিয়ে গেলো। পরে এসে ঘরবাড়ি তছনছ করে দিলো। এরপর তুর্কমেন শিক্ষিকাদের, নিজের দু বাচ্চা ও সৎ কন্যাকে নিয়ে অন্যত্র রওনা দেন তিনি কিন্তু পথিমধ্যে আইএস যোদ্ধারা তাদের গতিরোধ করে আটক করে। জড়ো করা হয় আরও অনেককে, সব মিলিয়ে ২২ জন। আর সূচনা হয় এই নারীর জীবনে দেখা আরেক নৃশংসতম অধ্যায়ের।” বিবিসি।