কামাল॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একাধিক মামলার কার্যক্রম হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে। একইদিনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সব মামলা স্থগিত হয়েছে। একই সময়ে বেগম জিয়ার দুটি দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালত তাগাদা দিচ্ছে। আপিল বিভাগে গেলে চেম্বার কোর্ট থেকে মামলা যাচ্ছে নিয়মিত বেঞ্চে। বেগম জিয়ার উপদেষ্টা মশিউর রহমান যখন দুর্নীতির মামলায় সাজা পাচ্ছেন, তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশরফ সহ কয়েকজনের দুর্নীতির মামলা হিমঘরে। বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। সরকার ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ করছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
তাদের মতে, সহায়ক সরকারের ব্যাপারে বিএনপির অনঢ় অবস্থান নিলে সরকার বিএনপিতে ভাঙ্গন ধরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর এজন্যই বিএনপির মামলার দুরকম নীতি সরকার গ্রহণ করেছে। যদিও সরকার বলছে আদালত তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আদালতের ব্যাপারে সরকারের কোনো হাত নেই। কিন্তু বেগম জিয়া এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘বেঈমানির চেষ্টা করবেন না। ফল ভালো হবে না।’
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনতেই হবে, এমন একটা চাপ দেশের ভেতরে ও বাইরে আছে। সরকারও উন্নয়ন সহযোগীদের আশ্বস্ত করছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই আসবে। ২০১৪ সালের ভুল বিএনপি করবে না। কিন্তু বিএনপির ভেতরের খোঁজ খবর যারা রাখেন, তারা মনে করেন, ২০১৪ থেকে বিএনপির অবস্থানের একটুও পরিবর্তন হয়নি।
‘শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়।’ এই মৌলিক অবস্থানে বিএনপি অনঢ়। বিএনপির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বেগম জিয়া স্পষ্ট করেই এই মনোভাব জানিয়েছেন। সহায়ক সরকারের আগে বিএনপি ৩ টি মামলার পরিণতি দেখতে চায়। এর দুটি হলো বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির মামলা। অন্যটি তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা।
এর মধ্যে তারেক জিয়ার মামলাটির যুক্তিতর্ক চলছে। এরপর রায়ের দিন ঘোষণা হবে। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি মামলাই শেষ পর্যায়ে। মামলা দুটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকার পক্ষের কৌসুলিরা যারপরনাই চেষ্টা করছে। এই মামলায় দন্ডিত হলে বেগম জিয়া আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবার অযোগ্য হবেন। তারেক জিয়া ইতিমধ্যেই প্রার্থী হবার অযোগ্য হয়েছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন, ‘বেগম জিয়া ও তারেক জিয়া যদি নির্বাচনের অযোগ্য হন, তাহলে বিএনপির জন্য নির্বাচনে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্যই বিএনপি এখন নির্বাচন ইস্যুকে শেলফে তুলে রাখতে চাইছে।
কিন্তু নির্বাচন কি আর ভুলে থাকা যায়! কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অপেক্ষা না করে বিএনপির প্রায় সব সম্ভাব্য প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। এমনকি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও এলাকা গোছাতে কর্মীদের মাঠে নামিয়েছেন। এই ব্যাপারটিকে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা চক্রান্তের একটি অংশ হিসেবেই দেখছেন। বেগম জিয়াকে তারেক জিয়া এ ব্যাপারেই সতর্ক করেছেন বলে জানিয়েছেন বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠরা। তারেক মনে করছে, মূল বিএনপিকে বাদ দিয়ে দলছুটদের দিয়ে বিএনপি বানিয়ে সরকার ‘অংশগ্রহণমূলক’নির্বাচন করতে চায়।
আর এই পরিচালনার অংশ হিসেবেই সরকার তাদের মামলার কার্যক্রম বন্ধ করেছে, যারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় নির্বাচনে যেতে চাইছে। যারা সমঝোতার বাইরে থাকছে তাঁদের মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের অযোগ্য করা হচ্ছে। হঠাৎ করে মির্জা ফখরুল, ব্যারিস্টার মওদুদদের মামলা স্থগিতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন খোদ খালেদা জিয়াই।
ঘনিষ্ঠদের তিনি বলেছেন, তার কাছে খবর আছে সরকারের সঙ্গে বিএনপির অনেকেই গোপন আঁতাত করছে। এরা সরকারের অধীনে ‘নির্বাচনী আগুনে’ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত। বিএনপিতে খালেদা জিয়াপন্থীরা মনে করছেন, এরকম বিভক্তি যদি সত্যি ঘটে তাহলে বিএনপির জন্য দলের ভাঙ্গন ঠেকানো আর নির্বাচন ঠেকানো দুই কঠিন কাজ মোকাবেলা করতে হবে। সেটা কতটা সম্ভব?
বেঈমানির আভাস পেয়েই বেগম জিয়া দুএকজন ছাড়া কারও সঙ্গেই তেমন কথাবার্তা বলছেন না। বিএনপিতে কারা কারা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন, তার তথ্য সংগ্রহে তিনি সোর্স লাগিয়েছেন, এমন খবর বিএনপিতে জোরেসোরেই আলোচিত হচ্ছে।