টিআইএন॥ গত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বনানীর বাড়ি বিক্রয়ের খবর। তিলকে তাল করাই কি মিডিয়ার কাজ। আর বর্তমানে স্যোসাল মিডিয়ার এই অসত্য সংবাদ প্রচারই চলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যার ফলে মিডিয়ার গ্রহনযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা লোপ পাচ্ছে দিন দিন। যে মানুষটিকে এবং যে দু:খের ঘটনাটিকে নিয়ে সত্যের আদলে কিঞ্চিত মিথ্যা রটানো হচ্ছো তার সত্যতা যাচায়ে বের হয়ে আসে আসল সত্য এবং গর্ব করার মতো কিছু। পারতপক্ষে সৈয়দ আশরাফের বনানীতে কোনো বাড়ি নেই বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা। শুধু বনানীই নয় ঢাকা শহরেই তার কোনো বাড়ি নেই।
শহীদ পরিবার ও জাতীয় চার নেতার নামে বরাদ্দ করা গুলশানের প্লট থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে হিসেবে তিনি ২ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তার ব্যংক থেকে লোন নিতে হয়। সেই লোনের টাকা শোধ করতেই ভাই-বোনদের কাছে তিনি সেই জমি বিক্রি করে দেন। অনাড়ম্বড় জীবনে অভ্যস্ত এ নেতা চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে লন্ডন থেকে জার্মানি নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় দু’বার প্লেনের টিকিটের তারিখও পরিবর্তন করেছিলেন।
সম্প্রতি সৈয়দ আশরাফের স্ত্রী শিলা ইসলামের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয় যেখানে বলা হয়, মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নিজের বনানীর বাড়িটি বিক্রি করেছেন। বাস্তবে তার বাড়ি তো দূরের কথা ঢাকায় কোনো প্লটও নেই। ১৯৯৬ থেকে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ১৯৯৬-২০০১ তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, ২০০৮ থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
ঘনিষ্ঠজনদের কাছে সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সৈয়দ আশরাফ। তারা বলছেন, সৈয়দ আশরাফের সততা সম্পর্কে বলার জন্য ভুল কোন তথ্য দেওয়ার দরকার নেই। ঢাকায় তার কোন বাড়িই নেই যে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি তা বিক্রি করবেন। বরং বাড়ি বিক্রি করেছেন বলা হলে মনে হয়, তিনি সরকারি কোন প্লট পেয়েছিলেন, তার অনেক টাকা যে বনানীতে তিনি বাড়ি করেছেন। আসলে এর কিছুই নেই তার।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সততার নজির তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোফাজ্জল হোসেন সুমন তার ফেসবুকে লিখেন : সৈয়দ আশরাফের কোন ব্যক্তিগত প্লট নেই। চার বারের সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারি প্লট এবং শুল্কমুক্ত গাড়ি ক্রয়ের সুবিধা আইনগতভাবে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু কোন প্লট নিয়েছেন কিংবা গাড়ি কিনেছেন বলে আমরা জানি না। যদিও প্লট নেয়া কিংবা গাড়ি কেনার বিষয়টি অসততার মধ্যেও পড়ে না। তবুও তিনি এসব সুবিধা গ্রহণ করেন নি।
আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদকের কিশোরগঞ্জ সদরের যশোদল ইউনিয়নের যশোদল গ্রামে ১৫ শতাংশ জমির উপরে একটি পৈতৃক বাড়ি এবং ময়মনসিংহের কলেজ রোডে ৮ শতাংশ জমির উপরে একতলা একটি বাড়ি রয়েছে যা তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন।
তার অন্য ভাইয়েরা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি সবসময় নিজেকে ব্যবসা থেকে দূরে রেখেছেন। তার কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানও নেই। বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সৈয়দ আশরাফ। আশরাফুল ইসলাম ৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
যুক্তরাজ্যে থাকাকালে তিনি সক্রিয়ভাবে লেবার পার্টির রাজনীতি করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট-পরবর্তী দীর্ঘ সময় তিনি যুক্তরাজ্যে প্রবাস জীবন কাটান। ১৯৭৬ সালে তার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি পাসপোর্ট ফিরে পান। যুক্তরাজ্যে থাকাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সোচ্চার করেন অস্থায়ী রাষ্ট্র্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ। এছাড়া লন্ডন যুবলীগ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।