শেখ কামাল সুমন॥ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার ‘ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণে ১৬ হাজার ৯০১ দশমিক ৩২ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর যানজট লাঘবের লক্ষ্যে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করা হবে।
একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে নগরীর শের-এ-বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে চলতি অর্থবছরের সপ্তম একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এ. এইচ. এম. মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘আজ একনেক ৩৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট পাঁচটি প্রকল্পকে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসবে ১২ হাজার ৪০২ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে অবশিষ্ট ২২ হাজার ১৬৪ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা আসবে।’
সভায় ১৩ হাজার ৬১০ দশমিক ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রথম ধাপের অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ (কাব) প্রথম ধাপের এই কাজটি সম্পন্ন করবে।
মোট ব্যয়ের ২ হাজার ৩৯৫ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এবং অবশিষ্ট ১১ হাজার ২১৪ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সম্পর্কে কামাল বলেন, ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি শুরু হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নবীনগর মোড় (সংযোগ সড়ক), আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল ও ইপিজেড হয়ে চন্দ্রার মোড় (সংযোগ সড়ক) পর্যন্ত।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, সাভার উপজেলা ও আশুলিয়া থানা এলাকায় সেতু বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
কামাল বলেন, ‘এই আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়েটি প্রস্তাবিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া, বাইপাইল-চন্দ্রার করিডোরের যানজট হ্রাস করবে এবং দেশের ৩০ টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ সহজ হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধান বিমানবন্দরে প্রতিবছর ৮০ লাখ যাত্রী পারাপারের ক্ষমতা রাখে। বিমানের যাত্রীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনা করে বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
কামাল বলেন, ইউহোশিন (কোরিয়া)-সিপিজি (সিঙ্গাপুর)-ডিডিসি (ঢাকা)-এর পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ ১৪ মিলিয়ন এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ ২৪.৮ মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করবে।
মন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া বিমানবন্দরের অবকাঠামো ক্রমবর্ধমান বিমান চলাচল চাহিদার বিবেচনায় যথেষ্ট নয়, বর্তমানে বিদ্যমান যাত্রী টার্মিনালের মাধ্যমে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও বোয়িং ৭৪৭-৮ এফ এবং ৭৭৭-৩০০ ইআর মত বড় বিমান উঠা-নামার জন্য এয়ারপোর্টটি উপযুক্ত নয় ।
কামাল ব্যাখ্যা করে বলেন- বিমান চলাচলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের করা হবে এবং এর ফলে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রধান প্রকল্পের আওতায় ৬৬.৮৭ লাখ ঘনমিটার জমি উন্নয়ন, প্রায় ১.০৮ লাখ বর্গমিটার ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণ, প্রায় ৬২ হাজার বর্গমিটার মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণ, ৪১ হাজার ২০০ বর্গমিটার নিউ কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ, ৫ হাজার ৯০০ বর্গমিটার ভিভিআইপি কমপ্লেক্স নিমার্ণ করা হবে।
অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে কুমিল্লা (টমচোম ব্রিজ)-নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেন (২,১৭০.৭৮ কোটি টাকা), বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা) এবং বালাশি ও বাহাদুরবাদে ফেরিঘাট নির্মাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের (১২৪.৭৭ কোটি টাকা) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।