আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ তোমরা শিকল খুলো না, মা জানতে পারলে আমাকে খুব মারবে, খেতে দেবে না’ এভাবেই আর্তনাদ করে উঠেছিল নেহা নুনিয়া নামের শিশুটি। যত দিন যায় মানুষ ততই বর্বরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এই বর্বরতার তালিকায় বাদ পড়েনি বাবা-মা।
সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক দুনিয়া জোড়া। সন্তান যতই অপরাধ করুক না কেন বাব-মা কখনই পারে না, তাকে কঠোর শাস্তি দিতে। কিন্তু সব কিছুকেই উপেক্ষা করে ভারতের দুর্গাপুরের পূর্বাচল আবাসনের এলাকায় দশ বছরের পালিত মেয়ে নেহাকে গলায় শিকল পেঁচিয়ে ২০ দিন ধরে গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখলো বাবা-মা। নেহা অপরাধ ছিলো সে সমবয়সিদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছিল।
গোয়ালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খুঁটির সঙ্গে শিকলে বাঁধা অবস্থায় বছর দশের নেহা নুনিয়ার দিন-রাত কেটেছে। গোয়ালঘরের এক পাশে ছোট একটি চৌকি। তার উপর রাখা রয়েছে গ্যাসের তিনটি সিলিন্ডার। চারদিকে ছড়ানো আবর্জনা। সেই চৌকির উপর তেল চিটচিটে গোলাপি রংয়ের জামা পরে দিন রাত কেঁদেছে সে। শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। গায়ে সাবান বা চুলে শ্যাম্পু অনেকদিন পড়েনি তা দেখেই বোঝা গিয়েছে। অমানবিক নির্যাতনে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
ক্রমাগত কাশি হচ্ছে তার। চোখ দিয়ে অনবরত জল ঝরে পড়ছে। শুধুমাত্র বাথরুমে যাওয়ার জন্য নেহার শিকল খুলে দেয়া হতো। পরিবারের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও কেউ তাকে ছেড়ে দেয়নি। এদিকে, ঘটনার কথা দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরার কানে পৌঁছালে তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে নেহাকে উদ্ধার করেন।
নেহা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘খেলাধুলো করতে আমার খুব ভালো লাগে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতাম। সেকারণেই বাবা, মা আমাকে গোয়াল ঘরে পুজোর আগে থেকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। দাদারা খেলতে যেত। কিন্তু ওদেরকে কেউ বকত না।’
দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘ওই নাবালিকাকে হোমে পাঠানো হবে। এই ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’